যে মেলা শুধুই নারীদের, যেখানে পুরুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ
বাংলাদেশ

যে মেলা শুধুই নারীদের, যেখানে পুরুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ

মেয়েদের প্রসাধনী, হস্তশিল্প, গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিংবা হরেক রকম খেলার সামগ্রী সবই রয়েছে। দেখতেও আর দশটা মেলার মতোই। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো এখানে যারা দর্শনার্থী ও ক্রেতা, তারা সবাই নারী। এই মেলায় কোনও পুরুষ প্রবেশ করতে পারে না। তাই তো মেলার নাম হয়েছে ‘বউমেলা’।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) ব্যতিক্রমী এই মেলা হয়ে গেলো দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে। ৬৬ বছরের পুরোনো এই ঐতিহ্যবাহী বউমেলা বসে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধন-সম্পদের দেবী শ্রী শ্রী লক্ষ্মীপূজার পরের দিন।

প্রতি বছরের মতো এবারও মঙ্গলবার দিনব্যাপী মেলা বসে ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সুজাপুর গ্রামের সর্বজনীন দূর্গামন্দির প্রাঙ্গণে। তবে নারীদের জন্য মূল মেলা বসে দুপুরের পর, যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় বসে শতাধিক দোকানপাট। যেখানে রয়েছে নারীদের প্রসাধনীসামগ্রী, শিশুদের খেলনাসামগ্রী, গৃহসজ্জাসহ প্রয়োজনীয় নানান রকম জিনিসপত্র ও নানান খাবারসামগ্রী। তবে এখানে যারা এসব দোকান নিয়ে বসেছেন তাদের মধ্যে পুরুষ বিক্রেতাও রয়েছেন। পুরুষ বিক্রেতা থাকলেও কড়াভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে পুরুষ প্রবেশে। তবে মেলার বাইরে অনেক উৎসুক পুরুষ দর্শনার্থীকে দেখা গেছে।

মেলায় এসেছেন সুজাপুর গ্রামের পল্লবী রানী। তিনি বলেন, ‘এই মেলা আমাদের নারীদের জন্য। ফলে একটা আলাদা অনুভূতি কাজ করে। দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজনও আসেন এই মেলাতে। এখানে মেলাতে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, ভাব বিনিময় হয়। মেলা মানেই মিলনস্থল।’

সুজিতা পাল বলেন, ‘আমরা অনেককিছু কেনাকাটা করলাম। ভালো লাগে এই মেলাতে। কোনও ধরনের সমস্যা হয় না। এককথায় অপেক্ষায় থাকি এই মেলার জন্য। তবে আমার স্বামীকে বাইরে রেখে আসতে হয়েছে।’

পুরবী রানী দাস বলেন, ‘মেলাতে এসেছি। অনেককিছু কিনছি, দেখছি। শুধু মেয়েদের জন্য মেলা। মেয়েদেরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। ফলে গর্ববোধ করছি। আমার দাদার সঙ্গে এসেছি, তবে দাদা বাইরে আছেন, আমাকে নিয়ে আবার বাড়িতে যাবেন।’

মেলার প্রধান ফটকে কথা হয় কয়েকজন পুরুষ দর্শনার্থীদের সঙ্গে। শিবেন সরকার বলেন, ‘আমার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে এসেছি। তাদের ভেতরে দিয়ে আমি অপেক্ষা করছি। এখানে আমরা যারা পুরুষ আছি তারাও বেশ উপভোগ করি এই মেলা। কোনোরকম ঝুট-ঝামেলা নাই।’

অরুণ রায় বলেন, ‘আমরা মেলাতে একপ্রকার পাহারা দিই। যাতে করে বাইরের কোনও পুরুষ ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। এই একটা দিন নারীদের স্বাধীনভাবে মেলাতে প্রবেশ করে ইচ্ছেমতো ঘোরার দিন। তাদেরকে প্রাধান্য দিতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগে।’

মেলার আয়োজক ও সুজাপুর সর্বজনীন দুর্গামন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অশেষ রঞ্জন দাস বলেন, ‘অনেক বছর আগে জমিদার বিমল বাবু এই মেলার আয়োজন করেছিলেন। সেই থেকে আজ অবধি চলছে এই মেলা। এই মেলা ৬৬ বছর ধরে চলে আসছে কোনও বাধা-বিঘ্ন ছাড়াই। এই মেলা স্থানীয়দের জন্য একটি ঐতিহ্য। শুধু নারীদের উৎসর্গ করে এমন মেলা দেশের আর কোথাও হয় কি না, তা আমার জানা নেই।’

সাধারণ সম্পাদক গৌর চন্দ্র সরকার বলেন, ‘এই মেলাতে শুধু নারীদের প্রবেশাধিকার থাকে। পুরুষরা এই মেলায় যেতে পারেন না। তবে সন্ধ্যা ৭টার পর এই মেলায় যখন কোনও নারী থাকে না তখন পুরুষরা প্রবেশ করার সুযোগ পান। মেলাতে যেকোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দলও তৈরি থাকে।’

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম খন্দকার মহিব্বুল বলেন, ‘মেলার নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন ছিল। সব বিষয়ে তদারকি ছিল, শান্তিপূর্ণভাবে মেলা শেষ হয়েছে।’

Source link

Related posts

‘মুন্নি বদনাম হুয়ি’ গান পড়ানো হবে ইংল্যান্ডের স্কুলে

News Desk

স্ত্রীকে গাড়িতে তুলে দিয়ে ফেরার পথে নৌবাহিনী কর্মকর্তা নিহত

News Desk

গোলাপগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের কমিটির অনুমোদন

News Desk

Leave a Comment