যে মেলায় আজও চলে পণ্য বিনিময়
বাংলাদেশ

যে মেলায় আজও চলে পণ্য বিনিময়

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুলিকুন্ডায় বসেছে তিনশ’ বছরের প্রাচীন ‘শুঁটকি মেলা’। এই মেলায় পণ্যের বিনিময়ে পণ্য বেচাকেনা হয়। শুঁটকি মেলাকে কেন্দ্র করে কুলিকুন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা।

সরেজমিন দেখা যায়, শুক্রবার সকাল ভোর থেকে পসরা সাজিয়ে বসেছেন শুঁটকি মাছের দোকানিরা। কয়েকশ’ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় অন্তত শতাধিক দোকানি শুঁটকি নিয়ে এসেছেন। এছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে বাহারি খাবার ও মাটির জিনিসপত্র নিয়েও এসেছেন অনেকে। এতে একদিকে শুঁটকি মেলা অন্যদিকে বসেছে গ্রামীণ মেলা। মেলায় বেচাকেনা ভালো হওয়ায় খুশি ক্রেতা-বিক্রেতারা।

ব্রহ্মণবাড়িয়ার সবচেয়ে উত্তরের উপজেলা নাসিরনগর। প্রাচীনকালে যখন কাগজের মুদ্রা প্রচলন হয়নি, ঠিক তখন থেকে এই অঞ্চলের কৃষকরা সদ্য উৎপাদিত ফসলের বিনিময়ে পণ্য বেচাকেনা করতেন। বিশেষ করে, আম, শিমের বিচি, মিষ্টি আলু, গোল আলু, শুকনা মরিচ ও ধানসহ বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়ে বিক্রি করতেন শুঁটকি মাছ। কালের বিবর্তনে এই মেলা অনেকটা জৌলুস হারিয়েছে। বিনিময় প্রথার ঐতিহ্য অনেকটা শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। তবে এখনও ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন মেলা পরিচালনা কমিটি। তাই আজও অল্প পরিসরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্য বিভিন্ন পণ্যের বিনিময় হয়েছে। মূলত প্রথা টিকিয়ে রাখতে এটা করা হয়েছে। পরে টাকার বিনিময়ে শুঁটকি মাছ বিক্রি হয়।

স্থানীয়রা জানায়, বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন আজ। সেই হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) চৈত্র সংক্রান্তি পালন শেষে সনাতন ধর্মালম্বীরা আজ পহেলা বৈশাখ পালন করছেন।

মেলায় পণ্য নিয়ে আসা ভগবতী রানী দাস জানান, ‌‘আমি এই বছর প্রথম মেলায় এসেছি। মেলার মধ্যে পণ্য বিনিময় হয়। তাই আমার উৎপাদিত শুঁটকি মাছ নিয়ে এসেছি। অনেকে আমার কাছ থেকে ডাল, আলু, মরিচ, শিমের বিচি ও কাঁচা আম দিয়ে শুঁটকি নিয়েছেন। আমিও তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন পণ্য পেয়েছি।

ক্রেতা রেনু মিয়া জানান, ‘আলু, ডাল, শিমের বিচি ও সরিষার বিনিময়ে আমরা শুঁটকি নিয়ে যাই। আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই মেলায় আসছি।’

এদিকে মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিক্রেতারা শোল, বোয়াল, গজার, বাইম, পুঁটি ও টেংরাসহ নানা জাতের শুঁটকির মাধ্যমে পসরা সাজিয়েছেন। চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতার দেখা পেয়ে খুশি দোকানিরা। অন্যদিকে দূর-দূরান্ত থেকে ভোজন রসিক ক্রেতারা মেলায় এসে পছন্দের শুঁটকি কিনতে পেরে অনেকটাই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

করোনার প্রভাব কাটিয়ে দুই বছর পর বসেছে ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মেলা

শুঁটকি মাছ বিক্রেতা পায়েল দাস বলেন, ‘এখানে সব ধরনের দেশি মাছের শুঁটকি নিয়ে এসেছি। দুই বছর পরে এই মেলা হচ্ছে। আশা করি মেলা একটু ভালো হবে।’

নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার বিশ্বাস আলী বলেন, ‘এক সময় এই অঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের জেলেদের বসবাস ছিল। সেই সময়ে কাগজের মুদ্রা প্রচলন ছিল না। এই অঞ্চলের জেলেরা জমিতে উৎপাদিত নানা ফসলের বিনিময়ে সাধারণ মানুষের কাছে শুঁটকি বিক্রি করতেন। সেই প্রথা থেকে আজও সেই শুঁটকি মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মেলার বয়স তিনশ’ বছরের কম হবে না। করোনার প্রভাব কাটিয়ে এবার দুই বছর পর মেলা হওয়ায় সবাই খুশি।’

মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওহাব আলী জানান, ‘মেলায় হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদ নেই। এই মেলায় আমরা আম, মরিচ ও সরিষাসহ বিভিন্ন পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি নিয়ে থাকি। এখানে প্রায় কয়েক লাখ টাকার শুঁটকিসহ অন্যান্য পণ্য বিনিময় হয়। এই মেলায় বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে অংশগ্রহণ করেন।এবার মাটির তৈরি খেলনা সামগ্রী ও খাবার দোকানসহ অন্তত পাঁচ শতাধিক দোকান বসেছে।  মেলা শনিবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত চলবে।

Source link

Related posts

স্টার লাইন ফুড কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে

News Desk

সরকারি চাকরিতে প্রায় ৪ লাখ পদ খালিই থাকছে

News Desk

রথযাত্রায় ৫ জনের মৃত্যু: প্রশাসন সতর্ক করলেও শোনেননি আয়োজকরা

News Desk

Leave a Comment