প্রতিটি গাছে ঝুলছে থোকায় থোকায় খয়েরি রঙের মিষ্টি আঙুর। এক সময়ের কল্পনার চিত্র এখন বাস্তব। দেশের মাটিতে বিদেশি জাতের আঙুর চাষে সাফল্য পেয়েছেন ঝিনাইদহ জেলার একাধিক উদ্যমী কৃষক ও কলেজছাত্র। স্বল্প খরচে লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষের আগ্রহ বাড়ছে।
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের বনখিদ্দা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে কলেজছাত্র আবু জাহিদ এ চাষে সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে শখের বশে ১০ শতক জমিতে বাইকোনুর জাতের আঙুর চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথমে কুড়িগ্রাম থেকে আনা ৮০টি চারা রোপণ করে প্রাথমিকভাবে আঙুর চাষ শুরু করেন। ছয় মাসের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু করে। প্রথম বছর ফলন তুলনামূলক কম হলেও চলতি বছরে তার গাছগুলোতে থোকায় থোকায় আঙুরে ভরে গেছে।
আবু জাহিদ বলেন, ‘চাষের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ বছর আমি ৩৫০ টাকা কেজি দরে প্রায় ৪৫ হাজার টাকার আঙুর বিক্রি করেছি। গাছে এখনও প্রচুর আঙুর ধরে আছে। এখনও যে আঙুর বাগানে আছে তা ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো। পুরো ফল বাগান থেকেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।’
বাইকোনুর জাতের এই আঙুর দেখতে যেমন চমৎকার, খেতেও তেমন মিষ্টি ও সুস্বাদু। কিছু কিছু আঙুরে বিচি থাকলেও সঠিক পদ্ধতিতে মেডিসিন ব্যবহার করে সিডলেস (বিচিবিহীন) আঙুর উৎপাদন সম্ভব।
একই উপজেলার গোমরাইল গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা এমদাদুল হক জানান, তিনি ১৬ শতক জমিতে বাইকোনুর জাতের আঙুর চাষ করেছেন এবং একইভাবে সাফল্য পেয়েছেন। ‘বাংলাদেশের মাটিতে বিদেশি জাতের মিষ্টি আঙুর চাষ করা সম্ভব, তবে সঠিক জাত নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’, বলেন তিনি।
এমদাদুল আরও বলেন, ‘এ আঙুর দেখতে সুন্দর, খেতে মিষ্টি যার ফলে ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাগান থেকেই কিনে নিচ্ছেন। রোগবালাই কম, পরিচর্যার প্রয়োজন কম, তাই এটি একটি লাভজনক চাষ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আঙুর গাছ সাধারণত এপ্রিল-মে মাসে রোপণ করলে ভালো ফলন দেয়। গাছ লাগানোর ছয় মাসের মাথায় ফল পাওয়া যায় এবং বছরে দুইবার ফলন সম্ভব। তাই পরিকল্পিতভাবে বাণিজ্যিক চাষ করা হলে এটি হতে পারে দেশের কৃষিতে এক নতুন দিগন্ত।’
পাশের ভাতঘরা গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুরুল আলম রঞ্জু বলেন, ‘দেশে এমন চাষ হচ্ছে ভাবতেই অবাক লাগছে। এর বিস্তার ঘটলে আমাদের আর বিদেশি আঙুরের উপর নির্ভর করতে হবে না।’
কালীগঞ্জ শহরের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি বাগান থেকে সরাসরি আঙুর খেয়েছি। খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু। দেশেই এমন আঙুর চাষ সম্ভব হচ্ছে এটা দেশের জন্য একটি বড় সম্ভাবনা।’
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন, ‘আঙুর চাষ এ অঞ্চলে সম্ভাবনাময় একটি খাত হয়ে উঠছে। আমরা এই ধরনের উদ্যোক্তাদের পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছি।’