মশাল জ্বালিয়ে তিস্তা বাঁচানোর দাবি হাজারো মানুষের
বাংলাদেশ

মশাল জ্বালিয়ে তিস্তা বাঁচানোর দাবি হাজারো মানুষের

তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়, ভাঙন থেকে তীরবর্তী বসতি ও কৃষিজমি রক্ষাসহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে নদী তীরে মশাল প্রজ্জ্বলন করে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ কর্মসূচি পালন করেছে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি’। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলায় তিস্তা নদী তীরে পৃথকভাবে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

একইসঙ্গে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলা; কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, রংপুর ও নীলফামারীতে এ কর্মসূচি পালন করে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি’। তিস্তা তীরে হাজার হাজার মানুষ জলন্ত মশাল নিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নে বুড়িরহাট বাজার এলাকায় তিস্তা তীরে হাতে জ্বলন্ত মশাল নিয়ে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। বাদ্যযন্ত্রের তালে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচি পালন করেন তারা। নদী তীরে দাঁড়িয়ে গলা ছেড়ে তিস্তা নদী বাঁচানোর আকুতি জানান। এ সময় তিস্তা তীরে প্রজ্বলিত মশালের আলো নদীর পানিতে জ্বলন্ত প্রতিবিম্ব তৈরি করছিল। যেন তীরবর্তী বাসিন্দাদের দাবির স্ফুলিঙ্গ।

‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির’ কুড়িগ্রাম জেলার প্রধান সমন্বয়ক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার নেতৃত্বে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আন্দোলনে একাত্বতা জানান জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ। এ ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান হাসিবসহ যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও কর্মসূচিতে অংশ নেন। তাদের উপস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা উজ্জীবিত হয়ে কর্মসূচি পালন করেন।

কর্মসূচিতে মশাল হাতে অংশ নেওয়া স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর বলেন, ‘সারা বছর তিস্তায় পানি থাকে না। ফির হুট করি পানি আসিয়া সউগ ভাঙি নিয়া যায়। জমি যায়, বাড়িঘর যায়। শত শত মানুষক নিঃস্ব করছে এই তিস্তা। এই নদী বাঁচপার না পাইলে এলাকার মানুষও বাইচপ্যার পাবার নয়। সরকার হামার নদী বাঁচে দেউক।’

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ বলেন, ‘কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলাসহ রংপুর বিভাগের ১১টি স্পটে তিস্তা তীরে মশাল প্রজ্বালন করে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং মেগা প্রকল্প বাস্তব্য়ানের দাবিতে কয়েকটি জেলায় একযোগে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিস্তার নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হোক। একইসঙ্গে তিস্তা তীর সংরক্ষণ করে তীরবর্তী হাজারো বাসিন্দার নিরাপদ বসবাস এবং চাষাবাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। এগুলো তিস্তা তীরের মানুষের প্রাণের দাবি। নদী বাঁচলে মানুষ বাঁচবে, কৃষি বাঁচবে, জীববৈচিত্র্য টিকে থাকবে।’ 

গাইবান্ধার তিস্তাপাড়ে মশাল জ্বালিয়ে তিস্তা নদী রক্ষার দাবি

তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন ও নদী রক্ষার দাবিতে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর তীরে মশাল মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর তিস্তা নদীর মাওলানা ভাসানী সেতুর দক্ষিণ প্রান্তে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটির উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেন তিস্তা তীরবর্তী হাজারো মানুষ, স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সমময় মশাল হাতে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই” স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে তিস্তা ভাসানী সেতু এলাকা। বিভিন্ন ইউনিয়ন ও এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে মানুষ জড়ো হয় সেতুর পয়েন্টে। 

এর মধ্যে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজহারুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বাবুল আহম্মেদ ও সদস্যসচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিকসহ বিএনপি নেতারা পৃথক মিছিলের নেতৃত্ব দেন, যা পরে একত্রিত হয় মূল মশাল মিছিলে।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই আন্দোলন কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়; এটি নদী ও মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন। এ সময় তারা অবিলম্বে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে নদী ভাঙন, পানি সংকট ও জীবিকার সংকটে পড়া লাখো মানুষের জীবনরক্ষা করার আহ্বান জানান। এই কর্মসূচি দিয়েও যদি দাবি আদায় না হয় তাহলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে ঘোষণা দেন নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতারা।

Source link

Related posts

১২ বছর আগেই ‘লাইফটাইম’ শেষ হয়েছিল আগুন লাগা জাহাজ দুটির

News Desk

ফাগুনের আগেই খুলনায় গাছে গাছে আম্র মুকুল

News Desk

কক্সবাজারে পাহাড়ধসে একজনের মৃত্যু

News Desk

Leave a Comment