ময়মনসিংহে ডিসির বাসভবনের দেয়াল থেকে মুছে ফেলা হলো জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতি
বাংলাদেশ

ময়মনসিংহে ডিসির বাসভবনের দেয়াল থেকে মুছে ফেলা হলো জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতি

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসন ১৮ লাখ টাকা খরচ করে মুছে ফেলেছে জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের সীমানা প্রাচীরে আঁকা রক্তাক্ত জুলাই চেতনার গ্রাফিতি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর বিপ্লবী চেতনা ধরে রাখতে শিক্ষার্থীরা ময়মনসিংহ নগরীর বাসাবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস ও আদালতসহ জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের দেয়ালজুড়ে জুলাই চেতনার গ্রাফিতি অঙ্কন করেন।

বিপ্লবী শিক্ষার্থীদের আঁকা সেই রক্তাক্ত জুলাই চেতনার গ্রাফিতি মুছে ফেলে নতুন করে সীমানা প্রাচীরের দেয়াল রঙ করা হয়েছে। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী, ময়মনসিংহের স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা বলছেন, এটি জুলাইযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননার শামিল।

২০২৪ এর ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সারা দেশের মতো ময়মনসিংহের ছাত্র-জনতাও উল্লাসে মেতে ওঠেন। রক্তাক্ত জুলাইকে বুকে ধারণ করেন শিক্ষার্থীসহ আপামর জনসাধারণ। জুলাই আন্দোলনকে ধারণ করে ময়মনসিংহের দেয়ালে দেয়ালে রক্তাক্ত জুলাইয়ের গ্রাফিতি আঁকে শিক্ষার্থীরা। বাদ যায়নি জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের দেয়ালও। হেঁটে কিংবা কোনও যানবাহনে বাসভবনের সামনে গেলে দেয়ালে জুলাই গ্রাফিতি দেখা যেত। কিন্তু কয়েকদিন ধরে এখন আর তা দেখা যাচ্ছে না। কারণ, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের নির্দেশে জুলাই গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীসহ আন্দোলনে রক্তাক্ত হওয়া লোকজন। তারা বলছেন, জুলাই আন্দোলনের স্মৃতি এই গ্রাফিতি পছন্দ নয় বলেই সরকারি বাসভবনের সীমানা প্রাচীরে থাকা গ্রাফিতি মুছে ফেলেছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক।

নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠের পাশে অবস্থিত জেলা প্রশাসকের সরকারি বাসভবনের সামনে গিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে গিয়ে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দেয়ালের গ্রাফিতি মুছে ফেলা হয়েছে। দেয়ালজুড়ে নতুন করে রঙ লাগানো হয়েছে। ফলে গ্রাফিতির এখন আর কোনও চিহ্নই নেই। জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে দিয়ে যারা যাচ্ছেন, তারাই দেয়ালে তাকিয়ে দেখছেন। কেউ কেউ জোরেশোরেই বলছেন, গ্রাফিতি মোছার ঘটনাটি দুঃখজনক।

গ্রাফিতি মুছে ফেলে রঙ করার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজের প্রতিনিধি নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সম্পূর্ণ দেয়ালের কাজ পেয়েছে মাহবুব রেজা করিমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাহবুব এন্টারপ্রাইজ। জেলা প্রশাসকের বাসভবনের  দেয়াল আরও কয়েক ফুট উঁচু করতে, পুরো দেয়ালে রঙ করতে, দেয়ালের ওপরে কাঁটাতার লাগানোসহ আরও কিছু আনুষঙ্গিক কাজের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ টাকা।

তিনি আরও জানান, দেড় মাস যাবৎ কাজ করা হয়েছে। আগের দেয়ালের ওপর কোনও অংশে দুই ফুট, আবার কোনো অংশে তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট পর্যন্ত উঁচু করা হয়েছে। এরপর নতুন রঙ লাগানো হয়েছে। দেয়ালের ওপর কাঁটাতার লাগানো হবে। এরপর হবে লাইটিং। ঠিকাদার লোকের মাধ্যমে নতুন দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকবে এমন কোনও চুক্তি হয়নি বলে জানান তিনি।

রক্তাক্ত জুলাইয়ের গ্রাফিতি মুছে নতুন রঙ লাগানোর বিষয়টি নগরবাসীর অনেকের নজরে এসেছে। এতে ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফুঁসছেন তারা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া লোকজনও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। 

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের সাবেক সমন্বয়ক গোকূল সূত্রধর মানিক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, জুলাইয়ের প্রতিচ্ছবি শিক্ষার্থীরা দেয়ালে ফুটিয়ে তুলেছিল। জেলা প্রশাসনের মধ্যে কোনও পরিবর্তন হয়নি। তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে যেমন ছিল, তেমনই আছে এখনও। গ্রাফিতি মুছে দেওয়ায় এটাই প্রমাণিত হয়েছে। আমলাতন্ত্র জুলাই আন্দোলনেও অভ্যুত্থানবিরোধী ছিল, এখনও তাই আছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি কেন্দ্রীয় কমিটি উত্তরাঞ্চলের সংগঠক ও এনসিপি ময়মনসিংহ জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবুল বাশার জানান, যারা জুলাই স্পিরিট ধারণ করে না তারা ফ্যাসিস্টের দোসর। কাজেই রক্তাক্ত জুলাই চেতনার গ্রাফিতি মুছে ফেলা তাদের জন্য কোনও বিষয় নয়।

ময়মনসিংহ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ কামরুল হাসান জানান, জুলাই বিপ্লবের পর দেয়ালের গ্রাফিতি ছিল রক্তাক্ত বিপ্লবকে উজ্জীবিত রাখার প্রতীক। এটি মুছে ফেলা কোনোভাবেই কাম্য ও গ্রহণযোগ্য নয়।

ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন জানান, শিক্ষার্থীদের আঁকা দেয়ালের গ্রাফিতি রক্তাক্ত জুলাই চেতনাকে ধারণ করছে। জেলা প্রশাসক কেন এই গ্রাফিতি মুছে ফেলেছেন তার ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন ছিল বলেও তিনি মত দেন।

ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি অ্যাডভোকেট এএইচএম খালেকুজ্জামান জানান, রক্তাক্ত জুলাই চেতনার গ্রাফিতি মুছে ফেলা দুঃখজনক। এটি জুলাইযোদ্ধাদের অবমাননার শামিল।

গ্রাফিতি মুছে ফেলার বিষয়ে জানতে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে জেলা প্রশাসনের এনডিসি সাইফুল্লাহিল গালিব জানান, জেলা প্রশাসকের বাসভবনে সীমানা প্রাচীরের দেয়ালে কিছু সংস্কারকাজ চলতেছে। সংস্কারকাজ শেষে আবারও ২৪-এর আদর্শ ধারণ করা গ্রাফিতি আঁকানো হবে।

Source link

Related posts

হরতাল-অবরোধে প্রায় ফাঁকা চট্টগ্রাম, ছাড়েনি দূরপাল্লার বাসও

News Desk

৩ দিনেও বন্যাদুর্গতদের সংখ্যা জানতে পারেনি জেলা প্রশাসন

News Desk

মীরসরাইয়ের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি হাজারো পরিবার

News Desk

Leave a Comment