গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের পাঁচপীর বাজার থেকে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা-থানাহাট ইউনিয়ন সড়কে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত ১৪৯০ মিটার দীর্ঘ ‘মওলানা ভাসানী সেতু’ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। বুধবার (২০ আগস্ট) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গাইবান্ধায় সেতুটি উদ্বোধন করবেন।
গাইবান্ধা এলজিইডির তত্ত্বাবধায়নে সেতুটি নির্মাণ হলেও এর মূল সুবিধাভোগী হবে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের বাসিন্দারা। বিশেষ করে কুড়িগ্রামের উলিপুর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলার বাসিন্দাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে এই সেতু। এটি চিলমারী বাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার ফসল। চিলমারী থেকে কুড়িগ্রাম-রংপুর ঘুরে ঢাকায় যোগাযোগ এই অঞ্চলের মানুষের জন্য সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভোগান্তি এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধানতম বাধা ছিল। এই সেতুর উদ্বোধন এক নতুন যুগের সূচনা করবে বলে প্রত্যাশা এই অঞ্চলের কৃষক, ব্যবসায়ী ও শিক্ষর্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের। মূল উচ্ছ্বাস তাই চিলমারী প্রান্তে।
তবে উচ্ছ্বাসে ভাটা ফেলেছে চিলমারী প্রান্তে সেতুর সংযোগ সড়কের অসম্পন্ন ও ‘নিম্নমানের’ কাজ। চিলমারী প্রান্তে কুড়িগ্রাম এলজিইডি কর্তৃক নির্মাণাধীন ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন চিলমারীর ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সেতু উদ্বোধন হলেও শুধুমাত্র সড়কের কারণে তারা ব্যবহার বঞ্চিত থাকবেন। এজন্য তারা কুড়িগ্রাম এলজিইডি এবং স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করছেন।
চিলমারীর একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক গোলাম মাহবুব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেতুটি আমাদের দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন। উদ্বোধনের মূল উচ্ছ্বাসটা তাই আমাদের প্রান্তের মানুষের। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হলো। চিলমারী থেকে সেতুতে উঠতে দীর্ঘ যে সড়ক সেটি এখনও অসম্পূর্ণ। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সময় থাকতে সড়কের কাজ ফেলে রাখা হয়েছিল। আমি মনে করি হেয়ালি করেই এই কাজ বিলম্ব করা হয়েছে। কাজের মান নিয়েও আমাদের প্রশ্ন আছে। সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর এই সড়ক নির্মাণ ও মান নিয়ন্ত্রণে তেমন গুরুত্ব থাকবে কিনা তা নিয়েও আমাদের সংশয় আছে।’
সেতুটি আমাদের জন্য অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে বলে জানালেন চিলমারী উপজেলা বণিক সমিতির সভাপতি মাহফুজার রহমান মঞ্জু। তিনি বলেন, ‘এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ও ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য এই সেতু আশীর্বাদ হয়ে উঠবে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ যেতে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। এতে করে সময় ও অর্থ দুটোই বাঁচবে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সহজেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো যাবে। চিলমারী বন্দর চালু হলে আমাদের এই চিলমারী হয়ে উঠবে বাণিজ্যিক হাব। ভারতের আসাম ও ধুবরির সঙ্গে নৌপথে বাণিজ্য বাড়বে। উদ্যোক্তা ও বন্দরকেন্দ্রিক কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এককথায় এই সেতু এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ খুলে দেবে।’
‘তবে অত্যন্ত লজ্জার বিষয় হলো সেতু উদ্বোধন হলেও আমাদের এলাকার মানুষের উচ্ছ্বাস কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়বে এমনটা আশা ছিল না। উদ্বোধন হলেও সহসাই আমরা সেতু ব্যবহার করতে পারছি না। এত বড় একটি প্রকল্প উদ্বোধনের পূর্ব মুহূর্তে আমাদের প্রান্তে সড়কের কাজ অসম্পূর্ণ রাখা হয়েছে। আমি মনে করি এটি অবহেলার ফল। এই অবহেলা মেনে নেওয়া যায় না। এজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে জবাব চাওয়া উচিত। সেইসঙ্গে দ্রুত সেতুর সংযোগ সড়কের কাজ শেষ করার দাবি জানাই,’ চিলমারী প্রান্তে সংযোগ সড়কের কাজ শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউনুছ হোসেন বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রায় ২০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মওলানা ভাসানী সেতুর চিলমারী প্রান্তের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ চলমান রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সড়কের কার্পেটিং করা সম্ভব হচ্ছে না। আবহাওয়া অনুকূলে আসার পর দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
কাজের ধীরগতি এবং মান নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘আমি যোগদানের পর কাজের গতি বাড়িয়েছি। নিয়মিত নজরদারি ও তদারকির মাধ্যমে কাজের মান যথাযথ রাখার ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্তমানে কোনও সমস্যা নেই।’