বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলায় অস্বাভাবিকভাবে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে চরফ্যাশন, মনপুরা ও তজুমদ্দিন উপজেলায় পাঁচ সহস্রাধিক ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানির তোড়ে ভেসে গেছে সহস্রাধিক গৃহপালিত প্রাণী। চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় এখনও তিন থেকে চার হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এ ছাড়াও ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলার দুই স্থান দিয়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।
অপরদিকে, জোয়ারের পানিতে ২৩৪টি ঘের এবং দুই হাজার ৫৩৩টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৪৭৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সাগর মোহনার ঢালচর, চর কুকরি-মুকরি ও মুজিবনগর ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঢালচরের অধিকাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চর কুকরি-মুকরির চর পাতিলা এলাকা এবং মুজিবনগর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ তিন ইউনিয়নে প্রায় ৭-৮ শতাধিক গরু-ছাগল পানিতে ভেসে গেছে।
মনপুরা উপজেলার কলাতলির চরসহ বাঁধের বাইরের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এতে ৩ হাজার ৪০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশ কিছু গরু-ছাগল ভেসে গেছে। এখনও কিছু কিছু এলাকার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ, রমাগঞ্জ, ধলীগৌরনগর, চরভূতা ও পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ২০টি বসতঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হওয়ার পাশাপাশি কমপক্ষে ৫০০টি বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব সৈয়দাবাদ এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে দুটি গ্রাম ও অতিবৃষ্টিপাত এবং জোয়ারের পানির কারণে চরকচুয়াখালী এবং পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি জানান, চরফ্যাশনের তিনটি ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ৭-৮ শতাধিক গরু-ছাগল ও অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণী ভেসে গেছে। এখনও পানিবন্দি রয়েছে দুই হাজার পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৫০০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।’
মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিখন বণিক জানান, মনপুরার কলাতলি ইউনিয়নে বাঁধ না থাকায় পানিতে সেখাকার ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও বাঁধের বাইরে কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে তিন হাজার ৪০০ ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এখনও ক্ষতিগ্রস্তের পুরো খবর পাওয়া যায়নি।’
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা জানান, মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলার লালমোহনের সৈয়দাবাদ ও তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের স্লুইসগেট এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। লালমোহনের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে এবং তজুমদ্দিন উপজেলার বাঁধ সংস্কার কাজ চলছে।’
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলা জেলায় ২৪৩টি ঘের এবং দুই হাজার ৫৩৩টি পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে ৪৭৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও ১৪০টি মাছ ধরার ট্রলার এবং ৬৫টি মাছ ধরার জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলায় মৎস্য বিভাগের অবকাঠামোসহ সর্বমোট ক্ষতির পরিমাণ ৬৭২ লাখ টাকা।
ভোলার জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঝড়ে চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আনুমানিক পাঁচ হাজার ২০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০৮টি ঘরবাড়ি। এখনও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকার কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছেন।