সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয় লোকজন। এতে মহাসড়ক দুটিতে সৃষ্ট যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন চলাচলকারী যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা। আন্দোলনকারীরা ১১ ঘণ্টা পর আজকের মতো অবরোধ তুলে নিলে দুই মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়। পাশাপাশি অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। দুটি ইউনিয়ন পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অবরোধ চলবে বলেও জানিয়েছেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা থেকে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের পুকুরিয়া, হামিরদী, মাধবপুর ও নওয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এবং ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও আলগী ইউনিয়নের সুয়াদী এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এতে ভাঙ্গা হয়ে দুই মহাসড়ক দি য়ে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলায় যাতায়াত করা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে মহাসড়কের ওপর অবরোধকারীদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ১১ ঘণ্টা পর আজকের মতো অবরোধ স্থগিত করা হয়। আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে যান চলাচল শুরু হয় এবং আটকে থাকা যাত্রীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেন। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাধিকবার প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কথা হলেও আন্দোলনকারীরা মূল দাবি থেকে সরে আসেননি। এজন্য আগামীকাল সকাল ৭টা থেকে আবার মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, ভাঙ্গা, সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে এতদিন ফরিদপুর-৪ আসন গঠিত ছিল। আর ফরিদপুর-২ আসন ছিল নগরকান্দা ও সালথা উপজেলা নিয়ে। ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, ভাঙ্গার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এর প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন এলাকাবাসী। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে আবার মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে দুটি ইউনিয়ন পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিকালে ভাঙ্গা গোল চত্বরের ঢাকা-বরিশাল সড়কে বিক্ষোভ চলাকালে স্থানীয় বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক এম এ ওসমান গণি বলেন, ‘আগামীকাল থেকে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ চলবে। আগামীকাল থেকে স্কুল-কলেজ বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদেরও আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’
এ সময় আলগী ইউনিয়নবাসী ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। তারা বলেন- ‘অবৈধ কমিশন, মানি না, মানবো না’; ‘অবৈধ ডিসিশন (সিদ্ধান্ত) মানি না, মানবো না’; ‘আনোয়ারের রক্ত, কুকুরের খাদ্য, আনোয়ারের চামড়া তুলে নেবো আমরা’, ‘আনোয়ারের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে।’
পুখুরিয়া এলাকায় হামিরদী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. রহমত আলী বলেন, ‘আমরা কষ্ট করছি, হাজার হাজার মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। একজন স্ট্রোক করে মারা গেছে। আর নির্বাচন কমিশন বসে বসে দেখছে। এটা আমরা চাই না। আমরা যেখানে ছিলাম সেখানে আমাদের ফিরিয়ে দেন। তাহলে আমরা আন্দোলন করবো না।’
এদিকে এদিন উপজেলা পরিষদ কার্যালয় ঘেরাও ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা দিলেও সেটা করতে ব্যর্থ হন বিক্ষুব্ধরা। এদিন সকাল থেকে নিরাপত্তার বলয়ে ঢেকে রাখা হয় উপজেলা পরিষদ কার্যালয়। প্রবেশপথে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশকে যৌথভাবে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
এদিকে যানবাহন চালকদের বিকল্প তিনটি পথে চলতে হয়েছে আজ। বরিশাল থেকে ঢাকাগামীরা টেকেরহাট থেকে মাদারীপুর ও শিবচর হয়ে এবং ফরিদপুর থেকে ঢাকাগামী যানবাহন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের নগরকান্দা উপজেলার তালমার মোড় থেকে সদরপুর উপজেলার ভেতর দিয়ে পদ্মা সেতু এলাকায় উঠছেন। এ ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলের জেলার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগে পরিবর্তন করে চলেছেন যানবাহন চালকরা।
ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রোকিবুজ্জামান বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ভাঙ্গায় অবরোধের কারণে দুটি মহাসড়ক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সারাদিন অবরোধকারীরা মহাসড়ক দুটির বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন। অনেক মানুষ হওয়ায় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তবে সন্ধ্যা ৬টার দিকে অবরোধকারীরা অবরোধ তুলে নিলে দুটি মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিন ১০ কিলোমিটারজুড়ে যানবাহন আটকা পড়ে। এ ছাড়া পরিবহন চালকদের বিকল্পপথে চলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।’
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন মোল্লা বলেন, ‘বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। স্থানীয় এলাকাবাসী আমাদের কাছে স্মারকলিপি দিলে সেটা কমিশনে পাঠানো হয়। আশা করছি, তারা একটা সিদ্ধান্ত জানাবেন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হলে সমস্যা নেই। তবে কেউ সড়কে বিশৃঙ্খলা করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’