ফরিদপুরে রাতের আঁধারে নদী থেকে অবৈধভাবে বালুর তোলার মহোৎসব
বাংলাদেশ

ফরিদপুরে রাতের আঁধারে নদী থেকে অবৈধভাবে বালুর তোলার মহোৎসব

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের আদেশ অমান্য করে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের কুমার নদের উৎসমুখ মদনখালী এলাকায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু তুলছে প্রভাবশালী একটি মহল। সরেজমিনে রবিবার (১৬ ফেব্রয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডিক্রিরচর ইউনিয়নে এম এম ইটভাটা সংলগ্ন এলাকায় কুমার নদে একাধিক ভেকু মেশিন (এক্সকাভেটর) বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলতে দেখা গেছে। 

নদের ওই এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন এম এম ব্রিকসের মালিক শাহজাহান মিয়া। তার লোকজন দিয়ে রাতে তিনটি ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। মাটিগুলো ১০টি ট্রাকে করে নেওয়া হচ্ছে।

ফরিদপুর সদরের ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মদনখালী এলাকায় পদ্মা নদী থেকে কুমার নদের উৎপত্তি। ফরিদপুর শহর গড়ে উঠেছে এই নদের দুই পারে। ১২১ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গোপালগঞ্জের সেনদিয়া এলাকায় আড়িয়াল খাঁ ও মধুমতি নদীর সংযোগ খাল বিলরুট ক্যানেলে গিয়ে শেষ হয়েছে কুমারের যাত্রাপথ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নির্দেশ অমান্য করে শাহজাহান মিয়া গভীর রাতে নদ থেকে বালু তুলছেন। প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না স্থানীয় লোকজন। স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখিয়ে বালু তোলা হয়। রাতে বালু তুলে শহর রক্ষা বাঁধের ওপর দিয়ে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে নদ-তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে আছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার তিন বাসিন্দা জানান, এভাবে বালু তোলায় অনেক ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। আমরা যারা নদীর তীরে বসবাস করছি, ভাঙনের কারণে ভবিষ্যতে এখানে থাকতে পারবো না। শহররক্ষা বাঁধও হুমকির মুখে রয়েছে। পাশের ধুলায় নদী তীরের বাসিন্দারাও আক্রান্ত হচ্ছেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরশাত জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‌‘রাতে বালু তোলার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। কয়েকদিন আগে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাদের নির্দেশ উপেক্ষা করে যারা বালু উত্তোলন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করা হবে। কোনও ছাড় দেওয়া হবে না, সে যেই হোক।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ১০ কিলোমিটার শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। কাজটি সম্পন্ন হয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোল করায় হুমুকির মুখে রয়েছে শহররক্ষা বাঁধ।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নদী থেকে এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এখনই বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে বর্ষা মৌসুমে শহররক্ষা বাঁধ ধসে যাওয়ার শঙ্কা আছে।’

গত ২ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা ও পুলিশ সুপার মো. আব্দুল জলিলসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বালু উত্তোলনের স্থানগুলো এবং শহররক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন। নদী তীরের বাসিন্দারের সঙ্গে কথা বলে তাদের সমস্যার কথা শোনেন তারা। তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করেন। এ সময় তারা বলেছেন, আজকের পর কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে পারবে না। যদি কেউ দুঃসাহস দেখায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছেন তাদের বিরুদ্ধে এখনও আইনি কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

Source link

Related posts

‘শ্রমিক ও কৃষকের অধিকারের জন্য দাঁড়াতে হবে’

News Desk

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস আজ

News Desk

হাটে ছাগল আছে ক্রেতা নেই

News Desk

Leave a Comment