ফরিদপুরে এবার উৎপাদিত হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার পাট
বাংলাদেশ

ফরিদপুরে এবার উৎপাদিত হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকার পাট

হঠাৎ বৃষ্টিতেই কৃষকের মুখে যেন হাসি ফুটেছে। পাট জাগ দেওয়া নিয়ে পানি সংকটের দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষক। ‘পাটের রাজধানী’ খ্যাত ফরিদপুর জেলায় এ মৌসুমে পাট আবাদ হয়েছে ৮৬ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। ফলন হয়েছে তুলনামূলক ভালো। তবে আবাদে ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ, দাবি চাষিদের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, জেলায় এবার দুই হাজার কোটি টাকার পাট উৎপাদিত হয়েছে।

নয়টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ফরিদপুর জেলা। এই জেলায় রয়েছে পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতির মতো নদী। জেলার চরভদ্রাসন ব্যতীত বাকি আটটি উপজেলাতেই পাট চাষ করা হয় ব্যাপক হারে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্র মতে, এ জেলার পাটের আবাদ হয় মোট আবাদি জমির ৭৫ শতাংশের বেশি জমিতে। আর এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক কৃষাণ-কৃষাণি।    

ফরিদপুরের সালথা নগরকান্দা উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, জেলার সর্বত্রই এখন যেন পাট নিয়ে ব্যস্ত চাষিরা। কেউ ক্ষেত থেকে পাট কাটছেন; কেউ আঁটি বেঁধে মাথায় করে জাগ দেওয়ার জন্য পানির কাছে নিচ্ছেন; কেউ আবার জাগ দেওয়া পাট তুলে আঁশ ছাড়িয়ে ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে শুকানোর কাজ করছেন।

চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তুলনামূলক নিচু জমিতে এবার পাটের ফলন ভালো হয়নি, তবে উঁচু জমির চিত্রটা ভিন্ন। পাট আবাদে চাষিদের ব্যয়ও বেড়েছে অনেক, বপনের শুরুর দিকেই বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষিদের সেচ নির্ভর হতে হয়েছে। গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত অর্থ।

কথা হয় সালথা উপজেলার সাইফুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েক জন চাষির সঙ্গে। তারা বলেন, ‘এ মৌসুমে এক মণ পাট বাজারে নেওয়া পর্যন্ত খরচ হচ্ছে চার হাজারের মতো। এখন আপনারাই বলুন, কত টাকা বিক্রি করতে পারলে আমরা বেঁচে থাকতে পারবো।’

পাটচাষিদের দাবি, মণপ্রতি বিক্রয় মূল্য পাঁচ হাজার টাকার কম হলে গুনতে হবে লোকসান। তারা বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাট কাটার সময় ভালো বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে পানি নিয়ে চিন্তা নেই। আশা করছি, ভালো রঙ আসবে পাটে।’

এ বছর বৃষ্টিপাত হওয়ায় জাগ দেওয়ার পানির সংকট হয়নি ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফরিদপুরের পাললিক বেলে-দোআঁশ ও এঁটেল-দোআঁশ মাটি পাট চাষের জন্য বেশ উপযোগী। পাট চাষের জন্য উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া প্রয়োজন। ফরিদপুরের জলবায়ু এই বৈশিষ্ট্যগুলোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলেই পাট উৎপাদনে এ জেলা দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। এ জন্য এ জেলাকে পাটের রাজধানী বলা হয়।’

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাহাদুজ্জামান বলছেন, ‘চাষিরা পাটের ভালো রঙ পাবেন এবার। পাট পচনের সময় অতিবৃষ্টিপাত হচ্ছে, এ জন্য পাটের রঙ ভালো হবে। এ জন্য বাজারদর সন্তোষজনক হবে।’

এই কৃষি কর্মকর্তা আরও জানান, এবারের মৌসুমে দুই লক্ষাধিক মেট্রিক টন পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার বাজার মূল্য হবে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।

Source link

Related posts

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষ মাথা নত করে না, দিল্লির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তারা

News Desk

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে মাদারীপুরের ছাত্রলীগ নেত্রীর পরকীয়া

News Desk

কপোতাক্ষের ভাঙনে কয়রা-পাইকগাছায় আতঙ্ক

News Desk

Leave a Comment