প্রথমবার বাংলাদেশ-ভারতে একই সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, খুশি হলেও হতাশ জেলেরা
বাংলাদেশ

প্রথমবার বাংলাদেশ-ভারতে একই সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা, খুশি হলেও হতাশ জেলেরা

গত ১৫ এপ্রিল দিবাগত রাত থেকে ৫৮ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে এবারই প্রথম ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় জেলেরা খুশি হলেও সরকারি সহায়তা না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। এতে বিগত দিনের ঋণের বোঝা ও নিষেধাজ্ঞার দিনগুলোতে সংসারের ব্যয় নিয়ে চিন্তিত মোংলা ও সুন্দরবন উপকূলের কয়েক হাজার জেলে।

রবিবার (২০ এপ্রিল) সরেজমিনে মোংলা উপজেলার চাঁদপাই, চিলা ও জয়মনি এলাকায় গিয়ে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোংলা উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে সাত হাজার। আর অনিবন্ধিত ১২ হাজার জেলে। তাদের সবারই সাগর এবং সুন্দরবনের লাগোয়া নদ-নদীতে মাছ ধরেই জীবিকা চলে। এ ছাড়া সুন্দরবন উপকূলের শরণখোলায় নিবন্ধিত ২৭ হাজার ও অনিবন্ধিত ৪৫ হাজার, মোড়েলগঞ্জের নিবন্ধিত ২১ হাজার ও অনিবন্ধিত ৪০ হাজার এবং রামপালের নিবন্ধিত তিন হাজার ও অনিবন্ধিত পাঁচ হাজার জেলে রয়েছে। তাদেরও পেশা মাছ ধরা এবং তা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।

কিন্তু সাগর বা নদ-নদীতে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে নিবন্ধিত জেলেদের জন্য অবরোধকালীন খাদ্য সহায়তার চাল বরাদ্দ হলেও অনিবন্ধিত জেলেদের জন্য সরকারিভাবে কোনও সহযোগিতা নেই। এসব জেলেদের রয়েছে অন্তত প্রায় ১৫ হাজার মাছ ধরার ছোট-বড় নৌকা। এতে লক্ষাধিক জেলে নিয়মিত সাগরে মাছ শিকার করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করলেও সব রকম সরকারি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

জানা যায়, বঙ্গোপসাগরে রয়েছে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ। আরও ১৭৫ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত বা স্থান পরিবর্তন করেছে। এদিকে, প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার বদলে ভারতের সঙ্গে মিল রেখে ১৫ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সরকার। অবরোধের সময়সীমা কমিয়ে পুনর্বিন্যাস করায় খুশি সংশ্লিষ্ট নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত জেলেরা। কারণ হিসেবে তারা বলেছেন- আগের বছরগুলোতে বাংলাদেশের জলসীমায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা ছিল ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই। আর ভারতীয় জেলেদের ১৫ এপ্রিল থেকে ১৩ জুন। ফলে যখন বাংলাদেশ জেলেরা অবরোধে অলস সময় কাটাতেন, তখন সাগরে দাপিয়ে বেড়াতো ভারতীয় জেলেরা। সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশের মাছ লুটে নিত ভারতীয় জেলেরা। তবে এবার একই সময় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় বাংলাদেশের উপকূলের জেলেরা খুশি।

এ বিষয়ে জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির মোংলা শাখার সভাপতি বিদ্যুৎ মণ্ডল ও সাধারণ সম্পাদক রশিদ হাওলাদার বলেন, একই সময় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এখন আর ভারতীয় জেলেরা হাজার হাজার টন ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ চুরি করতে পারবে না। ভারতের জেলেরা ওই মাছ লুট করে নিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের জেলেরা পরে গিয়ে আর মাছ না পেয়ে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে আসে। সমিতি বা এনজিও থেকে হাজার হাজার টাকা ঋণ করে সাগরে যায়, কিন্তু মাছ পায় না, সব ভারতের জেলেরা নিয়ে যায়। এভাবেই বাংলাদেশের জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মাথার ওপরে বিশাল আকারে দেনার চাপ থাকে তাদের।

ভারতের সঙ্গে মিল রেখে প্রথমবারের মতো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় জেলেরা খুশি হলেও সরকারি সহায়তা না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। সুন্দরবন উপকূলের জেলে চিন্ময় ঢালী, জামাল শেখ, নাথন বিশ্বাস, মখোশ সরকার, কামাল শেখ, বছির উদ্দিন, নোয়াব আলী ও জাকির হোসেন বলেন, তাদের মতো অনেকেই প্রকৃত জেলে হয়েও নিবন্ধিত না হওয়ায় সরকারি কোনও সহায়তা পায় না। সরকারের দেয়া এ অবরোধের সময়ে একদিকে ঋণের বোঝা, অপরদিকে সংসারের খরচ মেটাতে চিন্তিত তারা। জেলেদের দ্বৈত পেশা না থাকায় বেশি করে সরকারি সহায়তা দেওয়া উচিত। যারা পায় তাদেরও সঠিক সময়ে দেওয়া হয় না। এ ছাড়াও সকল ঋণদাতা এনজিও বা সমিতিকে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা সময়ে কিস্তি বন্ধ রাখার দাবি জানান তারা।

দ্বৈত পেশা না থাকায় কষ্টে দিন কাটে জেলেদের

এ প্রসঙ্গে মোংলা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের অংশেই বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ বেশি পাওয়া যায়। যার ফলে প্রতিবেশী দেশ ভারতের জেলেরা অবৈধভাবে সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন করে এখান থেকে মাছ লুটে নেয়। কিন্তু বর্তমান সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারই প্রথম ভারতের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশে ৫৮ দিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এই সময় বাংলাদেশ বা ভিনদেশি কোন জেলে আইন অমান্য করে মাছ শিকারের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও মৎস্য বিভাগ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

এদিকে, নিষেধাজ্ঞার সময় বাংলাদেশের নিবন্ধিত জেলেদের মাথাপিছু ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। খুব শিগগির জেলেদের মাঝে তা বিতরণ করা হবে এবং অনিবন্ধিত জেলেদের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা।

Source link

Related posts

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কুমিল্লায় মহাসড়কে ভেঙে পড়েছে গাছ, ফসলের ক্ষতি

News Desk

একদিনে তিন লাখের বেশি মানুষ টিকা নিলেন

News Desk

কুমিল্লায় এসে বিয়ে করলেন ইন্দোনেশিয়ার তরুণী

News Desk

Leave a Comment