পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও পেলেন উপহারের ঘর
বাংলাদেশ

পাকা বাড়ি থাকা সত্ত্বেও পেলেন উপহারের ঘর

বসতভিটায় পাকা ঘর। আছে প্রায় পৌনে এক একরের বেশি ফসলি জমি। নিজেদের আবাদ করা ধানেই সংসার চলে। এমন ব্যক্তিদের ভূমিহীন দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি। অথচ পাশেই ভূমিহীন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির বসবাস হলেও উপেক্ষিত হয়েছেন তিনি। 

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর প্রদানে এমন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, কেউ তথ্য গোপন করে ভূমিহীনদের ঘর পেয়ে থাকলে তা সংশোধন করা হবে।

গত ২৬ এপ্রিল আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় ভূমিহীনদের মাঝে দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর ও জমি হস্তান্তর করা হয়। তৃতীয় দফায় কুড়িগ্রামের নয় উপজেলায় মোট ৬৩১ ভূমিহীনকে ঘর দেওয়া হয়। এরমধ্যে উলিপুর উপজেলায় ১৮০ ভূমিহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়। এসব ঘর প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে। সরেজমিন উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়ন ঘুরে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আপুয়ারখাতা গ্রাম। এই গ্রামে ভূমিহীনের ঘর ও জমি পেয়েছেন শ্যামল চন্দ্র বর্মন। তার পাশের ঘরটি পেয়েছেন প্রতিবেশী ধনঞ্জয় কুমার বর্মন। গত বুধবার দুপুরে শ্যামল ও ধনঞ্জয়ের পাওয়া ঘরে গিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। 

স্থানীয়রা জানান, পাশেই তাদের বসতবাড়ি। তারা সেখানে থাকেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পে সাংবাদিক এসেছেন এমন খবরে কিছুক্ষণ পর স্ত্রীদের নিয়ে উপহারের ঘরে আসেন শ্যামল ও ধনঞ্জয়। ঘর বরাদ্দ পাওয়ার সনদ দেখতে চাইলে তারা উভয়ে স্ত্রীদের মূল বাড়িতে পাঠিয়ে সনদ নিয়ে আসেন। স্থানীয়দের দাবির সত্যতা মিলেছে সনদ দেখে। শ্যামল ও ধনঞ্জয় ভূমিহীনদের ঘর ও জমি বরাদ্দের সনদ দেখিয়েছেন।

শ্যামল জানান, যে জমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর করে দেওয়া হয়েছে সে জমি সিএস খতিয়ানের মূলে তাদের পূর্বপুরুষদের। তাদের নিজেদের নামে জমি নেই। এজন্য পান্ডুল ইউপির তহশিলদার মোহন্ত কুমার সরকার ওই জমিতে ঘর করে দিয়েছেন। 

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্যামল ও ধনঞ্জয়ের পৈতৃক ভিটা ও আবাদি জমি রয়েছে। বাড়িতে সেমিপাকা ঘর রয়েছে তাদের। 

টিন ও ইট দিয়ে তৈরি ধনঞ্জয়ের বাড়ি

শ্যামল চন্দ্র বর্মনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় ১০ শতক আয়তনের বাড়ির ঘরটি সেমিপাকা। এখনও বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে। ঘরের ফটকে চেয়ারে বসে আছেন শ্যামলের বৃদ্ধ বাবা কামিনী কান্ত রায়। কথা হয় তার সঙ্গে।

কামিনী কান্ত রায় জানান, তার দুই ছেলে। এক ছেলেকে পাশেই জায়গা দিয়েছেন বাড়ি করার জন্য। শ্যামল তার সঙ্গে এই বাড়িতে থাকে। তাদের বসতভিটার আয়তন প্রায় ১০ শতক। আবাদি জমি আছে প্রায় ৮০ শতাংশ। 

পৈতৃক জমি থাকার পরও শ্যামলের নামে ভূমিহীনের ঘর বরাদ্দের বিষয়ে কামিনী কান্ত বলেন, ‘জমি তো আমার নামে। ছেলের নামে জমি নাই।’ 

নিজ বাড়ির ঘর কে নির্মাণ করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে কামিনী কান্ত বলেন, ‘শ্যামলের ছেলে ঢাকায় কাজ করে। সে টাকা পাঠিয়েছে, ওই টাকায় ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।’

ধনঞ্জয়ের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা করুণা চন্দ্র বর্মনের সঙ্গে কথা হয়। তাদের বসতভিটার আয়তন প্রায় ১০ শতক। বাড়িতে আছে ইট ও টিন দিয়ে তৈরি ঘর। আছে প্রায় ৪০ শতক আবাদি জমি।

ভূমিহীনের ঘর পাওয়ার বিষয়ে ধনঞ্জয় বলেন, ‘বাড়ি ও জমি বাবার নামে। আমার নিজের নামে কোনও জমি নেই।’

ধনঞ্জয়ের উপহারের ঘর

বাবার সম্পদ থাকার পরও সন্তানকে ভূমিহীন বলা যায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি ধনঞ্জয়ের বাবা করুণা চন্দ্র বর্মন।

স্থানীয়রা জানান, ঘর বরাদ্দ দেওয়ার আগে ইউএনও ও তহশিলদার সম্ভাব্য সুবিধাভোগীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন। ইউএনও শ্যামল ও ধনঞ্জয়ের বাড়িঘর দেখে গেছেন। এরপরও তাদের নামে গৃহহীনের ঘর বরাদ্দ হয় কীভাবে?

জানতে চাইলে পান্ডুল ইউপির তহশিলদার মোহন্ত কুমার সরকার বলেন, ‘আমি এসব জানি না। ভূমিহীনদের ঘর দিয়েছে উপজেলা ভূমিহীন কমিটি। আপনি এ ব্যাপারে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেন।’

ইউএনও বিপুল কুমার বলেন, ‘ভূমিহীনদের সনদ দেন চেয়ারম্যানরা। তহশিলদার ও চেয়ারম্যান এগুলো তদন্ত করে আমাদের প্রতিবেদন দেন। তাদের (শ্যামল ও ধনঞ্জয়) বাবার কী পরিমাণ সম্পত্তি আছে তা আমার জানা নেই। আমরা আবারও তদন্ত করবো। তথ্য গোপনের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবো।’

Source link

Related posts

পূজার ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত সুন্দরবন

News Desk

ময়মনসিংহে ২ নবজাতক করোনায় আক্রান্ত

News Desk

কেন্দ্র থেকে গ্রাম দূরে, ৭৫ মিনিটে দুই বুথে পড়েনি এক ভোটও

News Desk

Leave a Comment