নেত্রকোনা জেলায় গত এক বছরে ২৩২ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে অধিকাংশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। দিন দিন সড়কে মৃত্যুর মিছিল বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিচ্ছে। এছাড়া হত্যা, গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা, বিষপানে আত্মহত্যা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এবং পানিতে ডুবে এসব অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে জেলা পুলিশ, জেলার আধুনিক সদর হাসপাতালসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
তবে বেসরকারি হিসেবে জেলায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি হিসেবের চেয়েও অনেক বেশি বলে জানায় স্থানীয় সচেতন মহল। তাদের মতে, অনেক সময় নিভৃতপল্লী এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা, পানিতে ডুবে কিংবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কেউ মারা গেলে পুলিশি হয়রানি বা ময়নাতদন্তে কাঁটা-ছেড়ার ভয়ে প্রশাসনকে না জানিয়ে অথবা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি সাপেক্ষে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে তা সরকারি হিসেবে নথিভুক্ত হয় না।
নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ১৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৭টি, মার্চে ২৯টি, এপ্রিলে ২২টি, মে মাসে ২২টি, জুনে ১৪টি, জুলাইতে ১৮টি, আগস্টে ১২টি, সেপ্টেম্বরে ২১টি, অক্টোবরে ২৪টি, নভেম্বরে ২৩টি এবং ডিসেম্বর মাসে ১৬টিসহ মোট ২৩২টি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে কাজ করা জিয়া পরিষদ নেত্রকোনা শাখার সভাপতি সানাউল হক মাসুম বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে সবার আগে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ, জেলা পরিবহন মালিক সমিতি ও জেলা মোটরযান শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের উদ্যোগে সব ধরনের যানবাহন চালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ চালক হিসেবে তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি রাস্তায় কীভাবে গাড়ি চালাতে হয়- সেসব নিয়ম-কানুন সম্পর্কে তাদের সচেতন করতে হবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অদক্ষ এবং মাদকাসক্ত অবস্থায় কেউ যেন গাড়ি না চালায় এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলে, তার জন্য ট্রাফিক বিভাগকে আরও সততা এবং আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।’
নেত্রকোনা বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক জিএম নাদির হোসেন বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমরা বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান এবং অন্য যানবাহন চালকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ চালক-হেলপার ও পথচারীদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’
এ বিষয়ে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে নিরাপদ সড়ক আইন বাস্তবায়নে আমরা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে কাজ করছি। এছাড়া পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ ও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে চালক-হেলপারসহ পথচারীদের মাঝে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পুলিশ বিভাগ সড়ক দুর্ঘটনার পরপরই মামলা নিচ্ছে এবং অভিযুক্ত চালকদের গ্রেফতার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে।’