সিলেটের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে নেকাব খুলতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রীর বাবা ফেসবুকে পোস্ট দিলে স্থানীয়ভাবে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা বলছেন অধ্যক্ষ সুনীল আত্মগোপনে আছেন। তবে বাংলা ট্রিবিউনকে ওই শিক্ষক জানিয়েছেন ছুটি নিয়ে বাড়িতে আছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে বলেও দাবি করেন শিক্ষক সুনীল।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। যে প্রতিষ্ঠানকে নিজের বুকে আগলে রেখে শিক্ষকতা করেছি, সেই প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে আমার দুর্নাম ছড়াচ্ছে একটি চক্র। আসলে আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা কোনোভাবে সত্য নয়। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে পুরো বিষয়টির রহস্য উন্মোচিত হবে বলে আমি শতভাগ আশাবাদী।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন ১৫ মার্চ গণিত শিক্ষক না আসায় আমি ক্লাসে গিয়ে মাস্ক ও অক্সিজেন সম্পর্কে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করি। এ সময় এক ছাত্রীকে পরিপূর্ণ অক্সিজেন পেতে নেকাব খুলে ক্লাস করার কথা বলি। এখানে জোর করা কিংবা অসৌজন্যমূলক আচরণের কোনও প্রশ্নই আসে না। সেতো আমার মেয়ের মতো। ওইদিন ক্লাসে আরও শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। তাদের জিজ্ঞাসা করলেই সত্য প্রকাশ পাবে।’
স্থানীয়রা বলছে আপনি ঘটনার পর আত্মগোপনে রয়েছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা আমার বিরুদ্ধে না বুঝে ইন্ধন দিচ্ছে, তাদের প্রতি অনুরোধ সত্য জেনে কথা বলুন। ঘটনার পর ফেসবুকে লেখালেখি দেখে ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের পুরো ঘটনা খুলে বলার পর ছাত্রীর বাবা বিতর্কিত ফেসবুক পোস্ট ডিলিট করেছেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত দেখার পর আমি পরিচালনা পরিষদের সভাপতির কাছে দরখাস্ত দিয়ে ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে এসেছি। এখানে আত্মগোপনের কোনও প্রশ্ন আসে না।’
ছুটির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাসুম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র দাস আত্মগোপনে নয়, ১৫ দিনের ছুটিতে আছেন। তদন্ত কমিটি তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী সপ্তাহে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।’
শিক্ষক নেকাব খুলতে বাধ্য করেছেন কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই ছাত্রীর বাবা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসলে পুরো ঘটনা ভুল বোঝাবুঝি। শ্রেণিকক্ষে করোনা ও অক্সিজেন বিষয়ে আলোচনা করেন অধ্যক্ষ সুনীল চন্দ্র। এ সময় তিনি মাস্কের ব্যবহার নিয়েও আলোচনা করেন। কিন্তু অনেকেই বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে। ক্লাসে আমার মেয়ের নেকাব খোলার বিষয়ে প্রথমে আমি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। এরপর পুরো বিষয়টি জেনে আমার ভুল ভাঙে। নিজের ভুল স্বীকার করে আগের দেওয়া ফেসবুক পোস্ট ডিলিট করে নতুন করে আবার পোস্ট দিয়েছি।’
শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাইকিং করে অপপ্রচার কে চালিয়েছে, জানাতে চাইলে ছাত্রীর বাবা আরও বলেন, ‘ফেসবুকে আমার পোস্ট দেখার পর ভাদেশ্বর এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। পরবর্তীতে আমি ফেসবুক থেকে প্রথম পোস্টটি ডিলিট করে দিয়েছি। ঘটনার পর দিন এলাকাবাসীর পক্ষে কে বা কারা দুপুরের দিকে নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে স্থানীয়দের জড়ো হতে মাইকিং করে। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যানসসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এলাকাবাসীকে শান্ত করেন।’
ভাদেশ্বর নাছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ১৯৯৫ সাল থেকে শিক্ষকতা শুরু করেন সুনীল চন্দ্র দাস। ২০০৯ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান। ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ে কলেজ শাখা চালুর পর থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এদিকে গভর্নিং বডি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামীম আহমদ বলেন, ‘পুরো বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি। এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর বক্তব্যও শুনেছি। তদন্ত কাজ শেষ হওয়ার পর ঘটনার বিস্তারিত জানা যাবে।’
উপজেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।’ দ্রুততম সময়ে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।