নামেই শুধু সরকারি কলেজ, নানা সংকটে ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম
বাংলাদেশ

নামেই শুধু সরকারি কলেজ, নানা সংকটে ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম

অবকাঠামো, শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষক, আবাসিক সুবিধাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ। গত নয় বছরেও এটি পুরোপুরি সরকারি কলেজ হয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে চলছে প্রকট শিক্ষক সংকট। নতুন পদ সৃষ্টি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এটি নামেই শুধু সরকারি কলেজ। বাস্তবে কিছুই নেই।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লা সিটি কলেজ ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। নগরের টমছমব্রিজ সংলগ্ন আশ্রাফপুর এলাকায় এর অবস্থান। শুরুতে নাম ছিল গভ. কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট। ২০১৬ সালের ১২ মে এক প্রজ্ঞাপনে প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি ঘোষণার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রমভুক্ত করে এর নাম কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ করা হয়। সেইসঙ্গে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। তবে সরকারি কলেজের স্বীকৃতি পেলেও আগের সাত পদের শিক্ষক দিয়েই চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। 

সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজটিতে যাওয়ার কোনও সড়ক নেই। দুই পাশের উঁচু উঁচু ভবনের মাঝের কাঁচা গলি দিয়ে কলেজে প্রবেশ করছেন শিক্ষার্থীরা। ভেতরে গেলেই চোখে পড়ে কচুরিপানা আর জঙ্গলে ঘেরা ডোবা সংলগ্ন এক ক্যাম্পাস। আশপাশের সব এলাকা থেকে নিচু হওয়ায় পানি জমে আছে পুরো ক্যাম্পাসে। একাডেমিক তিনতলা ভবনের নিচতলায় অধ্যক্ষের কার্যালয়। তার পাশের কক্ষে বসেন গার্ডরা। এরপরেই শিক্ষকদের মিলনায়তন। অধ্যক্ষের কক্ষের বিপরীত পাশে অফিস সহায়কের কক্ষ। সব কক্ষের অধিকাংশ চেয়ার ভাঙাচোরা।

দোতলায় আছে কম্পিউটার ল্যাব। ২০ জনের কম্পিউটার ল্যাবে ঝুলছে তালা। খোলা জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় ল্যাবের জিনিসপত্র ধুলাবালুতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। করিডরে পড়ে আছে ভাঙাচোরা টেবিল। আর শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের ওয়াশরুমের দুর্গন্ধ ভেসে আসছে। তিনতলায় ক্লাসরুম। সেখানে পরীক্ষা দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। নেই পর্যাপ্ত পাখা, তাই পরীক্ষার হলেই ঘামছেন শিক্ষার্থীরা। ভাঙা জানালার ফাঁকে বৃষ্টি পড়ছে ভেতরে। কলেজের শ্রেণি কার্যক্রমের জন্য আছে আরও একটি পুরোনো ভবন। সেটির সংস্কার কাজ চলমান।

কলেজের মিলনায়তনে দেখা হয় শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জামশেদুল আলমের সঙ্গে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৬ সালে কলেজটি সরকারি হলে আসন সংখ্যা বাড়ে। কিন্তু বাড়েনি শিক্ষক। বর্তমানে এক হাজার ৫০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ আছে। প্রতি বর্ষে বিজ্ঞান বিভাগের ২৫০, মানবিক ২৫০ ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ২৫০টি করে আসন রয়েছে। তবে শিক্ষকদের সাতটি পদ আছে। ২০১৬ সালের পর থেকে আমরা পদ সৃজনের আবেদন করেছি। কিন্তু সৃজন হয়নি। কলেজের ওএসডি হওয়া ও বিশেষভাবে দায়িত্ব দেওয়া মোট ১৯ শিক্ষক রয়েছেন। আছেন তিন জন খণ্ডকালীন শিক্ষক। কলেজের ব্যবস্থাপনা ও পৌরনীতি বিভাগে কোনও শিক্ষক নেই। সবমিলিয়ে দুরবস্থা চলছে।’

চাহিদার অর্ধেকও নেই শিক্ষক

কলেজ থেকে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো পদ সৃষ্টির একটি প্রস্তাবনাপত্রে দেখা গেছে, বাংলা বিভাগে শিক্ষকের কোনও পদ নেই। এখানে প্রয়োজন একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন প্রভাষক। ইংরেজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদ থাকলেও প্রয়োজন আরও একজন প্রভাষক। আইসিটি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, সমাজকর্ম, ভূগোল, যুক্তিবিদ্যা, ইসলাম শিক্ষা, ফিন্যান্স, মার্কেটিং, গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাণিবিদ্যা ও কৃষিবিজ্ঞানে কোনও পদ নেই। কিন্তু প্রত্যেক বিভাগে প্রয়োজন একজন করে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক। সব মিলিয়ে কলেজে ৪০টি পদে শিক্ষক প্রয়োজন।

কলেজের দুজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কলেজটির চারপাশেই সমস্যা। শিক্ষক, কর্মকর্তা সংকটের সঙ্গে কর্মচারী সংকটের কারণে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা নিজেদের কাজের পর বাড়তি কাজ করলে ক্লাস করাতে বেগ পেতে হয়। দেড় একর কলেজ সীমানার প্রায় অর্ধেক ডোবা। ডোবার কারণে বিষাক্ত সাপ ও পোকামাকড় বাসা বেঁধেছে। সেগুলো প্রায়ই ভবনের ফটকে ও কক্ষে চলে আসে। এ ছাড়া ছয়টি ক্লাসরুম পর্যাপ্ত নয়। নেই বেঞ্চ ও চেয়ার। তাই অনেক শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে ক্লাস করে।

কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আলী আশ্রাফ মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কলেজে সংকটের শেষ নেই। ক্লাসরুম নেই। বেঞ্চ নেই। অডিটরিয়াম নেই। ডিজিটাল কনফারেন্স রুম নেই। বাস্তবে একটি সরকারি কলেজে যা যা থাকার কথা, তার কিছুই নেই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের জন্য কোনও ল্যাব নেই। শুধু একটি কক্ষে ল্যাব আছে দেখানো হয়েছে। আসলে কিছুই নেই সেখানে। কোনও কাজ করা যায় না। ২০ জনের কম্পিউটার ল্যাবটি তালা মারা থাকে সবসময়। আবাসিক হল না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়।’

এসব বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই সরকার ছাড়া সমস্যার সমাধান করা যাবে না। সংকটের শেষ নেই। গত ৯ বছরেও এটি পুরোপুরি সরকারি কলেজ হয়ে উঠতে পারেনি। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরকে জানিয়েছি। তারা কাজ করছে বলেছে। অনেক কাজ প্রক্রিয়াধীন। তবে ডোবা ভরাটের জন্য কোনও আবেদন করিনি। কারণ আবেদন করেও কোনও লাভ হয় না। সবচেয়ে বেশি সমস্যা শিক্ষক সংকট নিয়ে। কম্পিউটার ল্যাবের প্রকল্প শেষ হওয়ায় সংস্কার করতে পারছি না। আশা করছি, শিক্ষক সংকট নিরসনের বিষয়টি বিবেচনা করবে মন্ত্রণালয়।’

Source link

Related posts

পাবনা জেলা জামায়াতের আমিরসহ ৫ নেতা আটক

News Desk

অবৈধ মুঠোফোন বন্ধের প্রযুক্তি চালু হচ্ছে জুলাইয়ে

News Desk

কিশোরগঞ্জে ২৫ বছর পর উপজেলা আ.লীগের সম্মেলন

News Desk

Leave a Comment