খুলনার দাকোপে ভেঙে যাওয়া বাঁধ দুই দিনের মাথায় আটকানো সম্ভব হয়েছে। এ দুই দিনে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় ৮টি গ্রাম। এর ফলে এসব গ্রামে খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিতে পড়ে ৩০২ বিঘা জমির ধান। বাঁধ আটকানোতে এ ধান ঝুঁকিমুক্ত হলো।
এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক দ্রুত বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকী নদীর পানির তোড়ে ভেঙে যায় দাকোপের তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া এলাকার ১৫০ ফুট বেড়িবাঁধ। এরপর ৮ অক্টোবর রাতে বাঁধটি আটকানো হয়। কিন্তু ওই রাতের জোয়ারে আবারও বাঁধ ভেঙে যায়। এ ঘটনায় তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর কামিনীবাসিয়া, বটবুনিয়া, নিশানখালী, আড়াখালী, দক্ষিণ কামিনীবাসিয়া, ভাদলা বুনিয়া, মশামারী, গড়খালী ও কাঁকড়া বুনিয়া এলাকা কমবেশি প্লাবিত হয়। অব্যাহত জোয়ার-ভাটায় উত্তর কামিনীবাসিয়া, বটবুনিয়া, নিশানখালী, আড়াখালী গ্রামের বাসিন্দারা অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পতিত হন। দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এসব গ্রামের ২০ হাজার মানুষ।
অনেকে গৃহহারা হয়েছেন। আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। অনেকে আবার নিজ বাড়িতে পানিবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। এ ঘটনায় ৩০২ বিঘা জমির আমন ধান পানির নিচে তলিয়ে যায়। ভেসে গেছে ঘের ও পুকুরের মাছ। তলিয়ে আছে সবজির ক্ষেত। সবমিলে ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি টাকা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
দুর্গত এলাকায় এখন খাদ্য ও সুপেয় পানির তীব্র সংকট। বুধবার ভোর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩ দফা বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করে। জোয়ারের প্রচণ্ড স্রোত আর মাটির স্বল্পতায় বাঁধ আটকানোর কাজ ব্যাহত হয়।
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক অবস্থান করে মেরামত কাজ তদারকি করছে। ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন খুলনার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান। এ সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক পানিবন্দি মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাদের দুর্ভোগের কথা শোনেন। এ সময় তিনি তাদের মাঝে শুকনো খাবার চিড়া-গুড়সহ চাল, ডাল, তেল, লবণ, হলুদ ও মসলার ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। তিনি দুর্গতদের আশ্বস্ত করে বলেন, ‘খুব দ্রুত বাঁধ আটকানোর জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া এ ঘটনায় আপনারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের সহায়তা করা হবে।’
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাঁধ আটকানোর ফলে ধান ঝুঁকিমুক্ত হলো। কিন্তু ১৫ বিঘা জমির ধান ক্ষতি হলো। ১০০ মিটার এলাকায় খাল সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষতির শিকার কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে আঙিনায় সবজি চাষের বীজ দেওয়া হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, ‘স্রোতের তীব্রতা এবং মাটির স্বল্পতার কারণে বাঁধ আটকাতে বেগ পেতে হয়। তারপরও গত রাতে বাঁধটি আটকানো সম্ভব হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন দুর্গত ১৬০ পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার এবং ১২০ পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, তেল, লবণ, হলুদ ও মসলার ত্রাণের প্যাকেজ বিতরণ করেছে।’