আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ১৭ বছর আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বরিশালে নগরীর রূপাতলী এলাকা। মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার জিয়ার নেতৃত্বে সেখান থেকেই বিক্ষোভ মিছিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন হতো। এ কারণে ওই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরে থাকতো রূপাতলী। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জিয়া সিকদার দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে রাজপথ উত্তাল করে তুলতেন।
এসব কারণে অর্ধশতার্ধিক মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। এমনকি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে জিয়া সিকদারকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। তাতেও দমাতে পারেনি। ওই সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে বরিশালে আনা হয়। চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হয়নি। এজন্য তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে।
জিয়া সিকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজনীতির মাধ্যমে দেশ থেকে শুরু করে একটি এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধানে কাজ করা যায়। আর মানুষ তার নিজের জন্য কিছু চায় না। সে চায় তার এলাকার উন্নয়ন। তা করতে হলে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়া প্রয়োজন। দলের নেতাকর্মী এবং নগরবাসী আমাকে সিটি মেয়র হিসেবে দেখতে চান। এ নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নেতাকর্মীরা জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন। তবে আমার চাওয়া-পাওয়ায় কিছু হবে না। এজন্য দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে। আমি আশা করছি দলের জন্য আমার দেওয়া শ্রম বিবেচনায় এনে আমাকে সিটি মেয়রের মনোনয়ন দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে দলের কাছ থেকে পুরস্কারের অপেক্ষায় আছি।’
তিনি বলেন, ‘বিগত দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে আমার একটি কথা ছিল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে। তোমাদের রক্ত ঝরানোর পূর্বে রক্ত ঝরবে জিয়া সিকদারের। আমি দলীয় প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতাকর্মী এবং সমর্থকদের নিয়ে সড়কে সরব থেকেছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাত থেকে তাদের রক্ষায় সবসময় সচেষ্ট থাকতাম। প্রতিটি সদস্যের দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। কারণ তারা বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী হতে পারে। কিন্তু ওই পরিবারগুলো আমার ওপর ভরসা করে তাদের সন্তানকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে পাঠিয়েছে। সেই দায়িত্ব আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করায় তারা আমাকে হৃদয়ে স্থান দিয়েছে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে জুলাই আন্দোলনে মহানগর বিএনপির নেতকর্মীদের নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ি উল্লেখ করে জিয়া সিকদার বলেন, ‘সেসময় ফ্যাসিস্ট সরকারের সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে একাধিকবার হত্যা চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। তারা কোনোভাবে আমার ক্ষতি করতে না পেরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়। কিন্তু তাতেও দমাতে পারেনি। আল্লাহ আমাকে প্রতিবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরিয়ে এনেছেন। আন্দোলনের সময় সাবেক সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করেছিল। পরে বরিশালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ঢাকায় একটি ক্লিনিকে ভর্তি হই। সেখান থেকে গ্রেফতার করে বরিশাল কারাগারে এনে রাখা হয়। চিকিৎসার সুযোগটুকু থেকে বঞ্চিত করা হয়। ৫ আগস্ট দেশ ফ্যাসিস্ট মুক্ত হওয়ার পর কারামুক্ত হই।’
আমার শরীর দিয়ে যে রক্ত ঝরেছে, তা বরিশালে কোনও নেতার শরীর থেকে ঝরেনি জানিয়ে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি ওসব নেতাকর্মীর নেতা হয়ে থাকতে চাই। যাদের দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রামে কাছে পেয়েছি। মিছিলের সামনে থেকে শুরু করে পেছনে যে ছেলেটা ছিল, তাকেও একইভাবে মূল্যায়ন করা হবে। তবে যারা আশায় আছেন গরম ভাত খাওয়ার জন্য। তাদের সেই সুযোগ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেবে না বলে আমার বিশ্বাস। ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থাকায় এমন কোনোদিন নেই যে দিনটায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের বাসায় যায়নি। একবেলা বাসায় ভাত পর্যন্ত খেতে পারিনি। পরিবার-পরিজন ছেড়ে রাতে বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ঘুমাতে হয়েছে। সেই কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে পড়লে চোখে পানি চলে আসে। একটি সরকার কীভাবে এতটা ফ্যাসিস্ট হতে পারে। আমাদের দলের নেতাকর্মীদের ওপর যে বুলডোজার চালিয়েছে, তা কল্পনাও করা যাবে না। বিশেষ করে যারা সড়কে সরব ছিলেন তারা এদের নির্যাতন থেকে কোনোভাবেই রক্ষা পাননি। রক্ষা মেলেনি আমাদেরও। আমার গোটা পরিবার মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কোন দল থেকে নয়, জিয়া সিকদার বিএনপির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েই রাজনীতি করা শুরু করেন। যতদিন প্রাণ থাকবে ততদিন দলের হয়ে কাজ করতে চাই।’
জিয়া সিকদার বলেন, ‘এমনও প্রচার হয়েছে জিয়াকে তুলে নিয়েছে ক্রসফায়ার দেওয়ার জন্য। গণমাধ্যমকর্মীরা বিষয়টি জেনে আমার ছবি পর্যন্ত সংগ্রহ করেছেন। যা আমি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে মোবাইল করে আমার খবর নিয়েছেন অনেকে। তাদের আশ্বস্ত করেছিলাম, আমি ঠিক আছি, দোয়া করবেন। জীবনের মায়া ছেড়ে পরিবার পরিজন ছেড়ে দলের জন্য একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করেছি। চেষ্টা করেছি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ পালন করতে। একইসঙ্গে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির সংগ্রামে রাজপথে থেকেছি। আমি জেল থেকে মুক্তি পেয়ে খবর নিয়েছি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়েছেন কিনা। আমার মুক্তির চেয়েও তার মুক্তিতে সমগ্র দেশবাসী খুশি হন। তিনিই একমাত্র নেত্রী যিনি কারাগার-নির্যাতন সহ্য করেছেন। দেশ ছেড়ে যাননি। খালেদা জিয়ার জন্য চোখের পানি ফেলেননি এমন লোক পাওয়া যাবে না। জাতীয়বাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আদর্শ নিয়েই দলের কার্যক্রম চলছে। আর এই দলের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সর্বস্তরের মানুষ বিএনপির পতাকা তলে সমবেত হচ্ছে। এ কারণে বিএনপির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে সর্বস্তরের মানুষের কাছে। দেশ পরিচালনায় বিএনপির কোনও বিকল্প দল খুঁজে পাওয়া যাবে না।’