Image default
বাংলাদেশ

‘তোর মাকে দোয়া করতে বলিস আমি অভিযানে যাচ্ছি’, বাড়ি গেলো লাশ

জেএসএসের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমান অভিযানে যাওয়ার আগে মোবাইল ফোনে কথা বলেছিলেন বড় ছেলে হাসিবুর রহমানের সঙ্গে। ছেলেকে বলেছিলেন, ‘তোর মাকে দোয়া করতে বলিস। রাতে একটা অভিযান আছে, আমি সেখানে যাচ্ছি। কোনও ভুল করলে আমাকে ক্ষমা করতে বলিস, বাবা।’

এরপর চলে যান অভিযানে। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে এটাই তার শেষ কথা। বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাতে বান্দরবানের রুমার পাহাড়ি এলাকায় অভিযানে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরেছেন তিনি। সেখানে জেএসএস সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান এ সেনা কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ছেলে হাসিবুর রহমান বিলাপ করতে করতে বাবার বলা শেষ শব্দগুলো বারবার বলছিলেন। এর আগে সকালে ফোন দিয়ে হাসিবুরকে বাবার মৃত্যুর খবর জানানো হয়। মুহূর্তেই শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়ে পুরো পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের মাঝে।

হাবিবুর রহমানের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর এলাকায় হলেও পটুয়াখালী পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের টাউন বহালগাছিয়ার গাজী বাড়িতে জমি কিনে বাড়ি নির্মাণ করেন। সেটির নাম দেন ‘সেনা নিকেতন’। সেখানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বসবাস করতেন হাবিবুর।

সকালে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। সেনা নিকেতনে লাশ নিয়ে আসেন পটুয়াখালী শেখা হাসিনা সেনানিবাসের সদস্যরা। লাশ পৌঁছালে সেখানে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাকে একবার দেখতে সেখানে ভিড় করেন স্বজন ও এলাকাবাসী। সন্ধ্যা ৭টার দিকে গার্ড অব অনার ও পটুয়াখালীর আবুল কাশেম স্টেডিয়ামে  জানাজা শেষে সেনা নিকেতনের আঙিনায় তাকে দাফন করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর বান্দরবানের ৬৯ পদাতিক ব্রিগেড ও রিজিয়ন সদর দফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সন্ত্রাসী একটি দল বথিপাড়া এলাকায় অবস্থান করছে—এমন গোপন তথ্য পাওয়া যায়। এ সংবাদের ভিত্তিতে রাইংক্ষ্যং লেক ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গেলে সন্ত্রাসীরা অতর্কিতভাবে গুলি চালায়। এ সময় সেনাবাহিনীও পাল্টা গুলি চালালে তিন সন্ত্রাসী নিহত হয়। অন্য ৭/৮ সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়। তাদের এলোপাতাড়ি গুলিতে হাবিবুর রহমান মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

হাবিবুর রহমানের বড় ভাই খলিলুর রহমান জানান, হাবিবুরের পরিবারে বাবা-মা, স্ত্রীসহ হাসিব ও হাসান নামে দুই সন্তান রয়েছে। হাবিবুরের মৃত্যুর খবর শুনে তার অসুস্থ বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। মা সংজ্ঞাহীন হয়ে গেছেন। 

তিনি জানান, তার ভাই ছিল বটবৃক্ষের মতো। এলাকার সবাই তাকে ভালোবাসতো। গরিব, অসহায় মানুষের বিপদে এগিয়ে আসতেন, সাহায্য সহযোগিতা করতেন। যে কারণে এলাকার সবাই তাকে গরিবের বন্ধু বলে চিনতো। তার লাশ তার কথা অনুযায়ী বাসার পাশে নিজস্ব জমিতে দাফন করা হয়েছে। হা‌বিবু‌রের ছোট ছেলে হাসান সেনাবাহিনী‌তে কর্মরত।

ছেলে হাসিবুর রহমান জানান, তার বাবা হাবিবুর রহমানের চাকরির মেয়াদ ছিল মাত্র কয়েক মাস। চাকরি শেষ করে স্থায়ীভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে বসবাসের পরিকল্পনাও ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসার নাম দিয়েছিলেন ‘সেনা নিকেতন।’ কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। তার স্বপ্নের ‘সেনা নিকেতনের’ আঙিনায় হলেন দাফন।

হাবিবুর রহমানের বড় ভাই মো. খলিলুর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে হাবিবুর দ্বিতীয়। ২৮ বছর আগে সেনাবাহিনীতে হাবিবুর রহমানের চাকরি হয়। ছয় মাস পরে রিটায়ার্ড হওয়ার কথা ছিল। আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে হাবিবুর রহমান অন্যতম ছিল। আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে ভাইবোনদের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখতো। আজকে তার পরিবারকে কী বলে সান্ত্বনা দেবো, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। ভাইকে হারিয়ে কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।’

Source link

Related posts

অবশেষে খোঁজ মিলেছে আবু ত্ব-হা আদনানের

News Desk

খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল, কমেছে আলু-পেঁয়াজের দাম

News Desk

‘নেকাবকাণ্ড নিয়ে আত্মগোপনে নয়, ছুটিতে আছি’

News Desk

Leave a Comment