‘তোরে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, মায়ের বুক খালি করে চলে গেলি বাবা’
বাংলাদেশ

‘তোরে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, মায়ের বুক খালি করে চলে গেলি বাবা’

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে নিহত ওয়াসিম আকরামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারি আর আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশ। সন্তানের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে মাটিতে গড়াগড়ি করে কেঁদেই চলেছেন মা।

নিহত ওয়াসিম আকরাম (২৩) চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মেহেরনামা বাজারপাড়া এলাকার প্রবাসী শফিউল আলমের ছেলে।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর এলাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সংঘর্ষে তিন জন নিহত হন। এর মধ্যে একজন ওয়াসিম। আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এই খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে কান্নার রোল পড়ে। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা জ্যোৎস্না আকতার। ভাইবোনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে আকাশ-বাতাস।

সন্ধ্যায় বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছেন জ্যোৎস্না আকতার। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা বাড়িতে জড়ো হয়েছেন। তার কান্না দেখে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই কারও। 

বিলাপ করতে করতে মা বলছিলেন, প্রতিদিন একবার হলেও মোবাইলে আমার খবর নিতো। আজ থেকে আর আমার বাবা কথা বলবে না, খবর নেবে না। কোথায় চলে গেলিরে বাবা। তোরে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। পড়ালেখা করে অনেক বড় হবি। সব কিছু ফেলে মায়ের বুক খালি করে চলে গেলিরে বাবা। 

ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে আছেন বাবা। ভাইয়ের জন্য অঝোরে কাঁদছেন বোনেরা। প্রতিবেশীরা সান্ত্বনা দিলেও কিছুতেই থামছে না তাদের কান্না। 

পারিবারিক সূত্র বলছে, ওয়াসিম আকরামের বাবা প্রবাসে থাকেন। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে ওয়াসিম ছিলেন দ্বিতীয়।পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা উচ্চবিদ্যালয়ের থেকে এসএসসি পাসের পর চট্টগ্রাম কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। কলেজ শাখা ছাত্রদলের রাজনীতি করার পাশাপাশি পেকুয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওয়াসিমের লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। লাশ আনতে গেছেন তার স্বজনরা। লাশ বাড়িতে আনার পর বুধবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে পেকুয়ায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর এলাকায় এই সংঘর্ষ শুরু হলেও তা ছড়িয়ে পড়ে বহদ্দারহাট থেকে জিইসি মোড় পর্যন্ত। কয়েক কিলোমিটার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। একপক্ষ অপরপক্ষের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। কয়েকজন অস্ত্রধারীকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আহত হয়ে আন্দোলনকারীরা সেখান থেকে সরে গেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

‘তোরে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল, মায়ের বুক খালি করে চলে গেলি বাবা’

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হামলা ও গুলি ছুড়েছেন যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নিলে তিন জনের মৃত্যু হয়।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আন্দোলনে আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে তিন জনকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসক। আহত ৪০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি তাদের।’

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নুজহাত ইনু বলেন, ‘আহতদের হাসপাতালে আনা হলে তিন জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ওয়াসিমের শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন আছে। ফারুককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়েছিল। তার বুকে গুলি লেগেছে। ফয়সালের পিঠে গুলির চিহ্ন আছে।’

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক উপ-দফতর সম্পাদক মো. ইদ্রিস আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের গুলিতে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াসিম আকরাম নিহত হয়েছেন। তার লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যালে আছে। সে চট্টগ্রাম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল এবং নগরীর বদ্দারহাটে থাকতো।’

Source link

Related posts

চট্টগ্রামে জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটন

News Desk

এক জেলার ১২টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট, রোগীদের ভোগান্তি

News Desk

সিলেট নগরীতে অপরাধী শনাক্তে ১১০ সিসি ক্যামেরা

News Desk

Leave a Comment