ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৩৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজট দেখা দিচ্ছে প্রতিদিন। যানজটের কারণে যানবাহনের যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে খানাখন্দ ও সংস্কারকাজ ধীরগতিতে চলায় এক ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। ঈদযাত্রায় মহাসড়কের এ অংশে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা।
সবশেষ বুধবার মহাসড়কের ৩৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছিল। এদিন সরাইল উপজেলায় একটি কাভার্ডভ্যান বিকল হওয়ায়, মহাসড়কের বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের গর্ত ও সংস্কারকাজের জন্য সকাল ১০টা থেকে এ যানজট শুরু হয়। দুপুর ১২টার পর মহাসড়কটিতে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। বেলা ২টার পর সরাইল উপজেলার বেড়তলা থেকে বাবিউড়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজট লেগে যায়। বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সরাইলের পাশাপাশি আশুগঞ্জ, বিজয়নগর ও সদর উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত মহাসড়কটির প্রায় পুরো অংশে ৩৪ কিলোমিটার এলাকায় যানজট ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট লেগে ছিল। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তবে যানজট লেগেছে থাকছে। একই অবস্থা ছিল বৃহস্পতিবার। এদিনও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই অংশে থেমে থেমে চলছিল যানবাহন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়কে চলমান উন্নীতকরণ কাজটি ২০১৭ সাল থেকে ধীরগতিতে চলছে। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড’ এ কাজের তদারকি করছে। নানা কারণে মাঝে কয়েক দফায় কাজ বন্ধ ছিল। এ কারণে সরাইল বিশ্বরোড মোড়সংলগ্ন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যানবাহনগুলো ধীরগতিতে চালাতে হচ্ছে। এতে প্রায় প্রতিদিন সেখানে যানজট লেগে থাকে। গত কয়েকদিন ধরে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। পরে সরাইল উপজেলা প্রশাসন, সরাইল থানা পুলিশ এবং হাইওয়ে থানা পুলিশ ইট-বালু দিয়ে গর্ত ভরাট করে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে আবার সেখানে গর্তের সৃষ্টি হয়। যানবাহন বিকল হয়ে যানজট দেখা দেয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্বরোড মোড় গোল চত্বরের চারপাশে গর্ত এবং কুট্টাপাড়া এলাকায় মহাসড়কের এক পাশ বন্ধ করে সংস্কারকাজের জন্য যানজট লেগে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে এই যানজট কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়ক ছড়িয়ে পড়ছে।
ভোগান্তির কথা জানিয়ে মাইক্রোবাসচালক আব্দুল আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বুধবার চার ঘণ্টার মতো যানজটে আটকে ছিলাম। শেষে অনেক কষ্টে বিকল্প পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে পৌঁছেছি। প্রায়ই দিন সড়কটিকে যানজট লেগে থাকে। ঈদে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে আর ব্যবস্থাপনা ঠিক না থাকলে যানজট মহাআকার ধারণ করবে। বছরের পর বছর ধীরগতিতে সংস্কারকাজ চলায় এই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক শামীম আহমেদ বলেন, ‘মহাসড়কটি খানাখন্দে ভরা। প্রতিদিন সড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজট লেগে যায়। বৃহস্পতিবার আশুগঞ্জ থেকে শাহবাজপুর চান্দুরা পর্যন্ত যানজট ছড়িয়েছে। একবার যাত্রী নিয়ে কেউ এই রাস্তায় এলে দ্বিতীয়বার আসে না। সময় ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা।’
ঢাকা থেকে আসা যাত্রাবাহী বাসচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কের ৩৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট লেগে থাকছে প্রতিদিন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। ভোগান্তির শেষ নেই আমাদের।’
খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সাতবর্গ পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার অংশে প্রায়ই প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে। নিত্যদিনের ভোগান্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে। শত চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কারণ একদিকে সড়কে খানাখন্দ আরেকদিকে যানবাহনের চাপ। চালকদের পাল্লা দিয়ে ওভারটেক এবং ছোট যানবাহনগুলো এলোপাতাড়ি চলায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদের আগে মহাসড়ক মেরামত করা শেষ না হলে তীব্র ভোগান্তির শিকার হতে হবে চালক ও যাত্রীদের। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের বারবার জানিয়েছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারফ হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দিয়েছি আমরা। তারা দ্রুত কাজ শেষ করে সড়কটি উপযোগী করে তুললে সমস্যা হতো না। কিন্তু ধীরগতি কাজ করছে। সবশেষ বুধবার তাদের বলেছি, অন্তত গর্তগুলো ভরাট করে মেরামত করে দেন। যান চলাচলের উপযোগী করে তোলেন। যদি তারা না করে তাহলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’