রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর দাফন টাঙ্গাইলে নিজ নিজ গ্রামে সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে জেলার মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শি ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের স্থানীয় মাদ্রাসায় তানভীর আহমেদের (১৪) এবং সখিপুর উপজেলায় হতেয়া কেরানিপাড়া গাবলের বাজার মাঠে মেহেনাজ আক্তার হুমায়রার (৮) নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।
নামাজে জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
মৃত তানভীর মির্জাপুর উপজেলার ওয়ার্শি ইউনিয়নের নগরভাতগ্রাম গ্রামের রুবেল মিয়ার ছেলে। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। হুমায়রা সখিপুর উপজেলার হতেয়া কেরানীপাড়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেন রানার মেয়ে। সে ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা দেলোয়ার হোসেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। তিনি বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণে বেঁচে গেছেন।
এর আগে সোমবার রাতে মরদেহগুলো অ্যাম্বুলেন্সে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে আনা হয়। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। আশপাশের লোকজন এসে ভিড় করেন। নিহতদের বাবা-মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ব্যবসার কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে রুবেল উত্তরা এলাকায় বসবাস করেন। তার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে তানভীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণি এবং ছোট ছেলে তাসরীফ হোসেন তৃতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করছিল। সোমবার (২১ জুলাই) সকালে তানভীর তার ছোট ভাই তাসরীফকে নিয়ে স্কুলে যায়। দুপুর ১২টার দিকে স্কুল ছুটি হলে তাসরীফ বাসায় চলে যায়। তবে কোচিং ক্লাস থাকায় তানভীর স্কুলে থেকে যায়। দুপুর সোয়া ১টার দিকে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিধ্বস্ত হলে তানভীরসহ কলেজের অনেক শিক্ষার্থীরা হতাহত হয়। এ সময় তানভীরকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত তানভীরের চাচাতো ভাই সজীব বলেন, ‘তানভীরের স্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়ার। সে লেখাপড়ায় খুব মনযোগী ছিল। সোমবার বিমান দুর্ঘটনায় তানবীরের মৃত্যুর খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনদের কান্নায় চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সকালে তানভীরকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।’
এদিকে, সকাল ৯টার দিকে সখিপুর উপজেলার হতেয়া কেরানিপাড়া গাবলের বাজার মাঠে হুমায়রার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে বাড়ি থেকে লাশ নেওয়ার সময় হুমায়রার কফিনে তার বাবা দেলোয়ার হোসেন চুমু খেয়ে মেয়েকে শেষ বিদায় জানান। এ সময় মেয়ের মুখ দেখতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
হুমায়রার বাবা বলেন, ‘আমি আমার সন্তানকে সুস্থ অবস্থায় স্কুলে রেখে আসি। আমার সন্তান ছুটি শেষে বাড়িতে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি তাকে বলেছি, “তোমার মা তোমাকে নিতে আসবে।” সবচেয়ে কষ্টের বিষয়, আমার স্ত্রী স্কুলে গিয়ে পৌঁছেছে মাত্র, ক্লাস রুমের কাছাকাছি গেছে। তখনি তার সামনে দিয়ে বিমানটি মেয়ের ক্লাস রুমের ভেতরে ঢোকে। আমার স্ত্রীর চোখের সামনে বিমানটি পড়েছে। আমার স্ত্রী বারবার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।’ এ ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করেন তিনি।
নিহত হুমায়রার চাচাতো ভাই কাউসার আহমেদ বলেন, ‘গত রাত ২টার দিকে হুমায়রার লাশ বাড়িতে এসে পৌছায়। সে সময় সবাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। আমার চাচার একমাত্র মেয়ে ছিল হুমায়রা। পরে সকাল ৯টার দিকে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার লাশ দেখার মতো অবস্থা ছিল না। পুরো শরীর আগুনে পুড়ে গিয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার নামাজে জানাজায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম ছবুর রেজা ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।’