ছুটি শেষে রাকসু নির্বাচনের প্রচারণা শুরু, কাটেনি শঙ্কা
বাংলাদেশ

ছুটি শেষে রাকসু নির্বাচনের প্রচারণা শুরু, কাটেনি শঙ্কা

দুর্গাপূজার ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৪ অক্টোবর) থেকে শুরু হয়েছে ক্লাস ও পরীক্ষাসহ সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। ক্যাম্পাসে নতুন করে বইতে শুরু করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনি হাওয়া। ছুটির পর প্রচারণার সময়সীমা শুরুর প্রথম দিনেই প্রার্থীরা চালিয়েছেন প্রচারণা। প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছুটছেন শিক্ষার্থীদের কাছে। তবে রবিবার (৫ অক্টোবর) প্রচারে বাধা ছিল বৃষ্টি। পাশাপাশি ভোট নিয়ে এখনও শঙ্কা কাটেনি প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, রবিবার দিনের শুরু থেকেই ছাত্রদল, ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলসহ অন্যান্য প্রার্থীরা নতুন উদ্যমে প্রচারণা শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের সামনে, টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন মার্কেট, আমতলা, হল পাড়াসহ সবখানেই ভোটারদের কাছে নিজেদের ইশতেহার ও ব্যালট নম্বরসহ লিফলেট বিতরণ করেছেন। প্রচারে তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন ব্যালট নম্বর। ভোটারদের কাছে দোয়া এবং ভোট চাচ্ছেন। তবে সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় খোলায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। প্রচারণায় বাধা ছিল বৃষ্টিও।

প্রার্থীরা বলছেন, প্রচারণা পুরোপুরি জমে উঠতে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে। নির্বাচনের একাধিকবার তারিখ পরিবর্তন ও পোষ্য কোটার বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা এখনও রয়েছে। তবে তাদের দাবি, রাকসুর ভোট শিক্ষার্থীরা চান। তারা এটা নিয়ে বেশ আশাবাদী।

রবিবার ছাত্রশিবির মনোনীত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী ফাহিম রেজাসহ প্যানেলের একাংশ প্রচারণা চালিয়েছেন কয়েকটি একাডেমিক ভবন ও নবাব আব্দুল লতিফ হলে। ফাহিম বলেন, ‘নির্বাচনের ঠিক আগে তারিখ পরিবর্তন ও পোষ্য কোটার বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসায় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা এখনও রয়ে গেছে। তবে আমাদের দাবি রাকসু নির্বাচন। এটা নিয়ে বেশ স্বতঃস্ফূর্ত আমরা।’

ছাত্রদল মনোনীত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট ও তার আশপাশের এলাকায়। এ সময় প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী নাফিউল জীবন বলেন, ‘একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। এজন্য আমাদের দাবি ছিল, পূজার পরে নির্বাচনের। কমিশন সে দাবিটি আমলে নেয়। বড় ছুটি শেষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসতে শুরু করেছেন। দীর্ঘদিন পরে রাকসু নির্বাচন হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে আলাদা একটা উদ্দীপনা রয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।’

এদিন সর্বজনীন শিক্ষার্থী সংসদের প্রার্থীরাও প্রচারণা চালিয়েছেন পরিবহন মার্কেট এলাকায়। প্যানেলের নারী বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী সামসাদ জাহান বলেন, ‘রাকসু নিয়ে অনেক টালবাহানা চলছে। তবে এটা শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীরা এটা আদায় করে নেবেই।’

‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, ‘শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে কর্মবিরতি সেটি আবারও ফিরবে কিনা আমরা নিশ্চিত নই। আবার শিক্ষকদের যে দাবি শিক্ষার্থীদের বিচারের মুখোমুখি করা সেটি শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে বলে আমাদের মনে হয় না। সব মিলিয়ে রাকসুতে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হবে কিনা এটি নিয়ে একটা শঙ্কার জায়গা তো আছেই। তবে আমরা আশাবাদী থাকতে চাই।’

তবে নির্বাচন কমিশন সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাকসু নির্বাচন পেছানোর কারণে প্রচারণার সময় বাড়ানো হয়েছে। ৫ থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাতে পারবেন প্রার্থীরা। এ ছাড়া ১৬ অক্টোবর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কর্মবিরতি না হলে রাকসুতে কোনও বাধা নেই।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষকদের দাবি অনুযায়ী একটি কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্যও আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, পোলিং এজেন্ট নিয়োগসহ শিক্ষকদের ভেতর থেকে দায়িত্ব পালন করার মতো কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। শিক্ষকদের দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে ভিন্নতা না থাকায় শিক্ষক-কর্মকর্তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। যেহেতু আগামী ১৬ অক্টোবর শিক্ষার্থীদের একটি বড় ইভেন্ট রয়েছে, সেখানে তাদের আর কর্মসূচিতে আসার কোনও শঙ্কা আমরা দেখছি না।’

গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রশাসন ১০টি শর্তে পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। ২০ সেপ্টেম্বর জুবেরি ভবনে উপ-উপাচার্যসহ কিছু শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিছু শিক্ষার্থীর ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতির ঘটনায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরপর জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতিতে যান। ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

পরিস্থিতি বিবেচনায় ২২ সেপ্টেম্বর জরুরি সভা করে নির্বাচন কমিশন ভোট পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর করার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই দিনই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন জামায়াতপন্থি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ২৪ সেপ্টেম্বর অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী সাত কর্মদিবসের সময়সীমা দিয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। পরদিন ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপিপন্থি তিনটি শিক্ষক সংগঠনও দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে কর্মবিরতি স্থগিত করেন।
২৯ সেপ্টেম্বর থেকে শারদীয় দুর্গোৎসবের ছুটি থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে যান। ২ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজার ছুটি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শুরু হয় ভোটের প্রচারণা।

Source link

Related posts

অদম্য সাহসিকতায় অপহরণকারীদের হাত থেকে ফিরে এলো স্কুলছাত্রী

News Desk

ডুবেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক, যান চলাচল বন্ধ

News Desk

বরিশালে ৩৩৩ নাম্বারে ফোন করে খাদ্য সহায়তা পেলেন ৫০০ পরিবার

News Desk

Leave a Comment