Image default
বাংলাদেশ

কুয়াকাটার সৈকতে ও চরে শত শত মৃত জেলিফিশ

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতসহ সংলগ্ন চর বিজয়ের উপকূলে মারা যাচ্ছে অরেলিয়া অরিটা প্রজাতির শত শত জেলিফিশ। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে কুয়াকাটা সৈকতে এমন চিত্র দেখা যায়। এ ছাড়া সংলগ্ন ঝাউ বাগান ও লেম্বুর চরেও কিছু মৃত জেলিফিশ দেখতে পান পর্যটকরা। তবে এ প্রাণীর মৃত্যুর সঠিক কারণ বলতে না পারলেও এটিকে স্বাভাবিকই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, এটি এক ধরনের সামুদ্রিক জলজপ্রাণী। প্রতিবছর শীত মৌসুমে কুয়াকাটা ও কক্সবাজার সৈকতে এরকম প্রাণী মৃত অবস্থায় দেখা গেলেও এ বছর পটুয়াখালীর কয়েকটি চরে বেশি দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

চর বিজয় বঙ্গোপসাগরের মধ্যে জেগে ওঠা কুয়াকাটা সংলগ্ন নতুন একটি চর। স্থানীয়রাই নামটি দিয়েছেন। অনেকে আবার ব-দ্বীপও বলেন। শীত মৌসুমে সাগরে মাছ ধরে ওই চরেই মাছ বিক্রি করেন আবু হানিফ নামে এক জেলে। কুয়াকাটার গঙ্গামতি এলাকার এই জেলে বলেন, ‘ওই চরে বসেই জাল থেকে মাছ ছাড়িয়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিই। তখন দেখা যায়, বেশ কিছু জেলিফিশও মাছের সঙ্গে আটকা পড়ে। আমরা সেগুলো চরেই ফেলি দিই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক জেলে দাবি করেন, বিষপ্রয়োগ করে চর বিজয় এলাকায় মাছ শিকার করার কারণে এসব জেলিফিশের মৃত্যু হয়েছে।

ওই চর থেকে মাছ সংগ্রহকারী ব্যবসায়ী সোবহান বলেন, ‘জোয়ারের সময় সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে অনেক জেলিফিশ ভেসে আসতে দেখি। তখন কিছু কিছু জেলি স্রোতের টানে নেমে গেলেও অধিকাংশই হালকা বালুতেই আটকে যায়। তখন ওই জেলির চারদিকে সামান্য গর্ত হয়ে কিছুক্ষণ নড়াচড়া করে। এরপরই মারা যায়।’

খুলনা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক আতিকুর রহমান বলেন, ‘যে কয়টা জেলিফিশ মৃত অবস্থায় দেখতে পেলাম, তার প্রতিটির আশপাশে সামান্য গর্তের মতো। এগুলো দেখলেই বোঝা যায়, পানির স্রোতে চরে এসে আর নামতে পারেনি।’

উপকূলীয় এলাকায় জলজপ্রাণী নিয়ে কাজ করা কুয়াকাটার আবুল হোসেন রাজু বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকতের গঙ্গামতি, লেম্বুরবন, খাজুরা এলাকায় মাঝে মধ্যে দুয়েকটি জেলিফিশ মৃত অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। এটা সবসময়ই কমবেশি দেখা যায়। নতুন কিছু বা আশঙ্কার মতো কোনও ঘটনা নয়।’

মৎস্য অধিদফতরের সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘জেলিফিশ। জেলির মত থকথকে দেহের কারণে এদের এমন নাম দেওয়া হয়েছে। নামে ফিশ হলেও এটি মাছ নয়, এর মেরুদণ্ড নেই। এগুলো স্রোতের বিপরীতে চলাচল করতে পারে না। যে কারণে সাগরে ঢেউয়ের তোড়ে যেকোনও সৈকতে এলে ভাটার টানে নামতে পারে না। তখন বালুর সঙ্গে শরীর আটকে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই হয়তো সেগুলো মারা যেতে পারে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গভীর সাগরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেলে এরা (জেলিফিশ) সাধারণত কম লবণাক্ত এলাকায় ছুটে যায়। সে কারণে গভীর সাগর থেকে উপকূলের দিকে আসতে থাকে। সেখানে বালুর সঙ্গে আটকা পড়ে মারা যেতে পারে। এ ছাড়া শীত মৌসুমে সাগরে মাছ কম ধরা পড়ায় জেলেরা গভীর সাগরের তুলনায় উপকূলবর্তী এলাকায় বেশি জাল ফেলে। তখন জালেও এ ধরনের জেলিফিশ ধরা পড়ে। আর সঙ্গে সঙ্গেই জালে পেঁচিয়ে জেলিফিশগুলো মারা যায়। পরে জেলেরা সৈকতের বিভিন্ন এলাকায় সেই জাল থেকে মাছ ছুটিয়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করলেও জালে থাকা জেলিফিশগুলো সৈকতেই ফেলে রেখে দেয়। তখন হয়তো অনেকে সেগুলো দেখে মনে করতে পারে, সাগর থেকে মৃত জেলিফিশ সৈকতে ভেসে এসেছে।’

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, মেরুদণ্ডহীন এসব প্রাণী চাঁদের মতো দেখতে বলে এদেরকে মুন জেলিফিশও বলা হয়। এগুলো মূলত সাঁতারে তেমন পারদর্শী নয়। অনেক সময় খাদ্য অন্বেষণে কিংবা বাতাসের টানে সৈকতের দিকে চলে আসে। পরে বালুতে আটকা পড়ে মারা যায়।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, ‘জেলিফিশ পাওয়া যায় প্রায় সব সমুদ্রে। আমাদের দেশে প্রায়ই কক্সবাজার, কুয়াকাটায় সৈকতে এদের আসতে দেখা যায়। কুয়াকাটা সৈকতে বিগত দিনে যেসব  জেলিফিশ মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে- তা সাধারণত পানির স্রোতে এসে নামতে না পেরে বালুর সঙ্গে আটকা পড়ে মারা গেছে। এরপরও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কিন্তু এটা নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই।’

Source link

Related posts

চাঁদপুরে করোনা-উপসর্গে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে

News Desk

রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে মাগুরা প্রেসক্লাবের মানববন্ধন

News Desk

আপনারা আমাকে হুকুম দেন: শামীম ওসমান

News Desk

Leave a Comment