কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
বাংলাদেশ

কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) কুড়িগ্রাম সফরে আসছেন ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামে জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’-এর জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করবেন তিনি। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু হলে দেশের দরিদ্রতম এ জেলার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ী ও বিশিষ্টজনরা। রাজার সফর সেই সমৃদ্ধির দুয়ার খুলে দেবে বলে মনে করছেন তারা।

এদিকে, জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে ধরলা তীরবর্তী প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত স্থানে ভুটানের রাজাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। রাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে এসএসএফ ও জেলা পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর নজরদারি রাখা হয়েছে।

সফরসূচি থেকে জানা গেছে, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগুয়েল ওয়াংচুক গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ সফরে ঢাকায় পৌঁছান। ঢাকায় অবস্থানকালে কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ তিনটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন তিনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজা ওয়াংচুক ঢাকা থেকে বিমানে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে সড়কপথে কুড়িগ্রাম যাবেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’-এর জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করবেন। এরপর তিনি জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট স্থলবন্দর পথে ভারত হয়ে ভুটান ফিরে যাবেন।

বেজা নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু হলে এখানে জেলার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প ছাড়াও এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে কিছু ভারি শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠারও পরিকল্পনা রয়েছে। উভয় দেশের বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দুয়ার খুলে যাবে।

জেলার বিশিষ্টজনরা বলছেন, ভুটানের রাজার কুড়িগ্রাম সফর বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তার সফর জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক বিকাশে এক মাইলফলক সৃষ্টি করবে। যৌথ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে কুড়িগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জোন হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দরিদ্রতম জেলার তকমা উঠে গিয়ে মানুষের জীবনমানের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে।

নদ-নদী ও চরাঞ্চল অধ্যুষিত এ জেলায় কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসহ শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে। কুড়িগ্রাম-ভুটান বাণিজ্যিক এই সম্পর্কের পাশাপাশি ভারতের ‘সেভেন সিস্টার’ খ্যাত অঞ্চলগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগের অপার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

এ বিষয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত  ও সম্প্রতি স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী-সমাজকর্মী এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘আমি মনে করি, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি কুড়িগ্রামের দারিদ্র্যের মানচিত্র বদলে দেবে। ভুটান আসছে মানে এটি একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এটিকে ধরে কুড়িগ্রাম একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বড় অ্যাভিনিউ হতে যাচ্ছে। এই জেলা একটি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে হবে, আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে কাজ করবে। জেলার সার্বিক চিত্র বদলে যাবে। সামগ্রিকভাবে একটি জাগরণ হবে।’

কুড়িগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আব্দুল আজিজ মিয়া বলেন, ‘অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে কুড়িগ্রামে বেকারত্বের দুঃখ ঘুচে যাবে। বাইরে থেকে যদি ইনভেস্টমেন্ট হয়, বায়াররা আসেন তাহলে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে, কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ব্যাপক প্রচার ও প্রসার লাভ করলে এখানে মাল্টিপল ডেভলপমেন্ট হবে।’

২০২৩ সালের মে মাসে লন্ডনে ভুটানের রাজা ও রানীর সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় সভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামে জিটুজি ভিত্তিক প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের জন্য জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ধরলা ব্রিজের পূর্বে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পূর্ব পাশে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন ও বেজা।

জেলা সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। ধরলা ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে সৈয়দ ফজলুল করিম (রহ.) জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার উত্তর-পূর্ব দিকে এই খাস জমির অবস্থান। প্রয়োজনে ওই স্থানে জমি অধিগ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

Source link

Related posts

পচবে না পেঁয়াজ-সবজি, কমবে দাম

News Desk

তাজউদ্দীন আহমদ কখনো সমঝোতা করেননি

News Desk

ঈদে ঢাকা ছেড়েছেন ১ কোটি সিম ব্যবহারকারী ফিরেছেন ৮ লাখ

News Desk

Leave a Comment