নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেফতারে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে বসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান। ছেলে জিসানের মুক্তির দাবিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা আছিয়া বেগম।
শনিবার (৩১ মে) বেলা ১১টায় জেলা কারাগারে বসে তিনি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন।
জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় অনলাইন পোর্টাল ‘প্রেস নারায়ণগঞ্জ’-এর প্রতিবেদক এবং প্রথম আলো পত্রিকার পাঠক সংগঠন বন্ধুসভার নারায়ণগঞ্জ কমিটির পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মো. ফেরদৌস মিঞা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টাব্যাপী ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন সাংবাদিক জিসান। তার পরীক্ষা ভালো হয়েছে।’
জেল সুপার মোহাম্মদ ফোরকান ওয়াহিদ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে বেলা ১১টায় জেলে বসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন সাংবাদিক জিসান। আজ একদিনেই তার পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের দেওভোগ এলাকায় অবস্থিত সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বাড়িতে প্রবেশ করে পুলিশ। এ সময় আইভীর গ্রেফতারের খবরে স্থানীয় বাসিন্দা ও নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে আসলে পুরো এলাকায় অবরোধ করে ও বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় আইভীকে গ্রেফতার না করতে অনুরোধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এদিকে গভীর রাতে আইভীর বাড়িতে পুলিশের আরেকটি দল প্রবেশ করে তার সঙ্গে কথা বলে। এ সময় মেয়র আইভী রাতের বেলা গ্রেফতার করতে নিষেধ করেন এবং দিনের আলোতে তাকে গ্রেফতার করার কথা জানান। রাতভর এই নাটকীয়তা শেষে শুক্রবার (৯ মে) ভোরে নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার নিজ বাড়ি থেকে সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পথিমধ্যে আইভীকে বহন করা গাড়িবহরে হামলা করে বিএনপি ও যুবদলের একদল নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় গত ১২ মে রাতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেফতারে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা এবং পুলিশ সদস্যদের আহত হওয়ার ঘটনায় ৫২ জনের নামসহ অজ্ঞাত আরও ১৫০- ২০০ জনকে আসামি করে সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. রিপন মৃধা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। সেই রাতেই সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসান, তার বাবা হানিফ ও চাচা শওকত মিথুনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সকলে মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
জেলে বসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার বিষয়ে বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাংবাদিক জিসানের মা আছমা বেগম। কান্না করতে করতে তিনি বলেন, ‘বিনা অপরাধে আমার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এখন আমার ছেলে কারাগারে বসে বসে বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা দিচ্ছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার সুবাদে ছেলেকে নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু এই মিথ্যা মামলা দিয়ে তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিলো। এখন আমাদের কী হবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অভাবের সংসার। স্বামী ফলের ব্যবসা করে আর ছেলে জিসান গত এক বছর ধরে সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেছে। সে পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছে। গত কয়েক মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য সে প্রস্তুতি নিয়েছে। পড়াশোনা নিয়ে সে সম্প্রতি খুব ব্যস্ত ছিল। কিন্তু এর মধ্যে গত ১২ মে রাতে জিসান, তার বাবা ও চাচাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এই মিথ্যা মামলা থেকে আমার ছেলে ও পরিবারের সদস্যদের মুক্তি চাই।’
সাংবাদিক জিসানের আইনজীবী আওলাদ হোসেন বলেন, ‘এই মামলায় জিসানকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে চার দফা জামিনের আবেদন করেছি। এরপর গত ২৮ মে জেলখানার বসে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (প্রথম) আদালতের বিচারক শহীদুল ইসলাম জেলা কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করেন। সে হিসেবে শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জিসান অংশগ্রহণ করে। তবে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও পরিকল্পিত।’