কমেনি হাতপাখার কদর
বাংলাদেশ

কমেনি হাতপাখার কদর

বর্তমানে লোডশেডিং কম থাকলেও জ্যৈষ্ঠের তাপদাহে বেড়েছে হাতপাখার কদর। গ্রাম থেকে শহর সবখানেই হাতপাখার ব্যবহার হয়। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হাতপাখার উৎপাদনও বেড়েছে। কুষ্টিয়ায় হাতপাখা শিল্পের কর্মীরা পার করছেন ব্যস্ত সময়। কারিগররা জানান প্রতি পিস পাখা তৈরিতে খরচ হয় পাঁচ-ছয় টাকার মতো। আর তা পাইকারিতে বিক্রি ১০-১২ টাকায়। প্রকারভেদে ৩০ টাকাতেও বিক্রি হয় একেকটি পাখা।  

কুষ্টিয়ার কুমারখালি উপজেলার সদকী ইউনিয়নের মালিয়াট গ্রামের অনেক পরিবার হাতপাখা শিল্পের সঙ্গে জড়িত। এখানে প্রায় প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে হাতপাখা তৈরির কাজ।

কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মালিয়াট গ্রামের প্রায় অনেক পরিবার পাখা তৈরির কাজ করেন। পাখা তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়। মূলত পাখা বিক্রির কাজ করেন পুরুষরা। তবে সংসারের কাজের পাশাপাশি রঙ মিশ্রিত বাঁশের কাঠি, সুঁই ও সুতো দিয়ে পাখা বাঁধার কাজ করেন পরিবারের নারী সদস্যরা। পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের কম বয়সীরাও পাখা তৈরিতে হাত লাগান। 

স্থানীয় মালিয়াট গ্রামের বাবলু মালিথা বলেন, ‘কুষ্টিয়া ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে পাখা তৈরির প্রধান কাঁচামাল তালপাতা কেনা হয়। প্রতি পিস পাতায় ৮ থেকে ১০টি পাখা তৈরি করা যায়। একটি বাঁশ কেনা হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। প্রতিটি বাঁশে শতাধিক পাখা হয়। প্রতিটি পাখা তৈরিতে খরচ হয় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় টাকা। তৈরি করা পাখাগুলো পাইকারি বিক্রি হয় প্রকারভেদে ১০-১২ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার তৈরি করা পাখাগুলো স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরেও বিক্রি করা হয়।’

একই গ্রামের রেজাউল শেখ বলেন, ‘খুব ছোট থেকেই এ কাজ করে আসছি। বিদ্যুৎ আর যান্ত্রিক যুগে হাতপাখার চাহিদা কমে গেলেও পৈতৃক পেশা হিসেবে ধরে রেখেছি। নারী ও পুরুষ সবাই মিলে দলবেঁধে কাজ করি। প্রতিটি দল দিনে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ পিচ পাখা তৈরি করা যায়।’

হাতপাখার কারিগর রহিমা বেগম বলেন, ঘরের কাজের পাশাপাশি পাখা তৈরির কাজ করি। যা আয় হয়, তাতে সংসার ভালোভাবে চলে যায়।

স্থানীয় একজন কলেজছাত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞানের যুগেও আমাদের এলাকায় ঐতিহ্যবাহী তালপাখা তৈরি হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি তালপাখা তৈরি করে নিজের খরচ মেটায়।’

কুমারখালী পৌরবাজার এলাকার খুচরা বিক্রেতা সালাউদ্দিন বলেন, ‘প্রায় ২৫ বছর ধরে পাখার ব্যবসা করি। বৈদ্যুতিক আর প্লাস্টিক পাখা আসায় আগের মতো তালপাতার পাখার চাহিদা নেই। তবুও শৌখিন হিসেবে অনেকেই কেনেন। এখানে প্রতি বৃহস্পতিবার উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রামে সাপ্তাহিক হাট বসে। এখানেও বিক্রি করা হয় এসব হাতে তৈরি পাখা।’

 স্থানীয় চৌরঙ্গী মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘ছাত্র জীবনে হাত পাখার ব্যাপক ব্যবহার থাকলেও বাড়িতে এখন বৈদ্যুতিক পাখা। তবে ঐতিহ্যবাহী হাতপাখার প্রচলন গ্রাম বাংলায় এখনও চোখে পড়ার মতো।’

এ বিষয়ে কুমারখালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, ‘ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসন উদ্যোক্তাদের প্রচার ও প্রসারের জন্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। এছাড়া ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কুষ্টিয়া শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আশানুজ্জামান বলেন, ‘হাতপাখা একটি শিল্প। কারিগরদের ভাগ্য বদলে কাজ করছে বিসিক। ইতোমধ্যে কুমারখালীতে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

 

Source link

Related posts

ঋণ খেলাপের অভিযোগে গ্রেফতার ১২ কৃষক জামিন পেয়েছেন

News Desk

১০ দিনে করোনায় আক্রান্ত ৬১৩ পুলিশ সদস্য

News Desk

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক

News Desk

Leave a Comment