বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন চলছে সেটির বিরুদ্ধে এবার আন্দোলনে নেমেছেন চিকিৎসক-নার্সসহ কর্মরতরা। হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা সবার নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিভিন্ন দাবি নিয়ে অনশনরত দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে তুলে দেওয়া হয়। শুক্রবারের (১৫ আগস্ট) মধ্যে এ আন্দোলন বন্ধ না হলে শনিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে স্লোগান দেন। ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে বিক্ষোভরতরা হাসপাতালের সামনের বান্দ রোড সড়কে অবস্থান নেন। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আবারও ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এ সময় হাসপাতালের মাঝের গেটে হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা নিয়ে অনশনরত দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে তুলে দেওয়া হয়।
সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত বিক্ষোভ সমাবেশ। সমাবেশ থেকে আন্দোলনরতদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। এতে করে তাদের কর্মপরিবেশ নষ্ট এবং তাদের নিরাপত্তার দাবি তোলেন। শুক্রবারের মধ্যে এ আন্দোলন শেষ না হলে শনিবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া মিড লেভেল ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সাখাওয়াত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, হাসপাতাল নিয়ে আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবির প্রতি আমাদেরও সমর্থন ছিল। পরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু জাফর তিনি বরিশালে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দাবি মেনে নেন। কিন্তু এরপরও তারা আন্দোলন চালিয়ে চিকিৎসা সেবায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে আন্দোলনকারীরা সারাক্ষণ হাসপাতালে রোগীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন।
তারা বলেন, এমনকি একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। তারা সারাক্ষণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করে চিকিৎসক ও নার্সসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে মানহানিকর শব্দচয়ন করছে। তারপরও আন্দোলন যৌক্তিকতা থাকায় আমরা চুপ ছিলাম। কিন্তু মহাপরিচালকের আশ্বাসের পর এ আন্দোলনের কোনও যৌক্তিকতা নেই।
চিকিৎসকরা বলেন, কে বা কারা অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছিত করেছে তা আমরা জানি না। আমাদের সাফ কথা, শুক্রবারের মধ্যে এ আন্দোলন বন্ধ না হলে শনিবার থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাবো। সে ক্ষেত্রে আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে দেশের অন্য হাসপাতালও থাকবে।
এ বিষয়ে হাসপাতালে দায়িত্বরত সহকারী পুলিশ কমিশনার বেলাল হোসেন বলেন, এখানে কোনও ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা কাজ করছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যখাতের সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক কথা বলেন এবং দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। এরপর আন্দোলনকারীদের একটি অংশ একমাসের আল্টিমেটাম দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন। একটি অংশ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার আসার দাবিতে আন্দোলনে অনড় থাকে।
গল ১৬ দিন ধরে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের সব হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দূর করারসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলন করছে ছাত্র-জনতা। প্রথমে আন্দোলন মেডিক্যাল ক্যাম্পাস এবং নগরী কেন্দ্রিক হলেও পরে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নগরীর নথুল্লাবাদ এলাকা অবরোধ করলে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রী-পথচারী থেকে শুরু করে যানবাহন সংশ্লিষ্ট এবং ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা।