এখনও থমথমে গোপালগঞ্জ, সারা দিন যা ঘটলো
বাংলাদেশ

এখনও থমথমে গোপালগঞ্জ, সারা দিন যা ঘটলো

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে বুধবার (১৬ জুলাই) দিনব্যাপী হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ, নির্বাহী অফিসারের গাড়িতে ভাঙচুর ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জেলার বিভিন্ন স্থান রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগ (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধ) নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় চার জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. জিবিতেশ বিশ্বাস।

এনসিপির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশের সামনেই এই হামলা চালানো হলেও কোনও বাধা দেয়নি।

এ দিন এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচির সমাবেশের জন্য তৈরি করা মঞ্চে প্রথমে হামলা ও পরে সমাবেশ শেষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

সমাবেশ শেষে গাড়ি বহরে ওঠার সময় এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর আবারও হামলা চালানো হয়। এ সময় নেতৃবৃন্দের গাড়িবহর অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পরে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পাহারায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি পুলিশ ও সেনাবাহিনী টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসক ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এ বিষয়ে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা ১৪৪ ধারা জারি করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে উঠিয়ে নেওয়া হবে।

ঘটনার সূত্রপাত
 
এনসিপির গোপালগঞ্জের কর্মসূচির তারিখ (১৬ জুলাই) ঠিক হওয়ার পর বেশ কয়েকদিন ধরে  আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দিবাগত রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মশাল মিছিল করে ফেসবুকে প্রচার করেন।

বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর ইউনিয়নের খাটিয়াগড় এলাকায় পুলিশের টহল গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় পুলিশ জানায়, গোপন সূত্রে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ জমায়েত হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়।

এদিন সকাল ১০টার দিকে গোপালগঞ্জ সদরের বৌলতলী ইউনিয়নের কংসুর বাসস্ট্যান্ডে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

কারা হামলা চালিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন।

তিনি আরও বলেন, আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার জন্য ওখানে গিয়েছিলাম। এর আগে পুলিশের গাড়ি পুড়িয়েছে। মূলত ওইটা পরিদর্শনে ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। ওখানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। সেখান থেকে ফেরার পথে তার গাড়ি বহরের ওপর হামলা করা হয়।

হামলার সময় রকিবুল হাসানের সাথে একজন ম্যাজিস্ট্রেটও ছিলেন। কিন্তু তিনি ও ম্যাজিস্ট্রেটের কোনও শারীরিক ক্ষতি না হলেও গাড়ির চালক সামান্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

এখনও থমথমে গোপালগঞ্জ, সারা দিন যা ঘটলো

দুপুর সাড়ে ১২টার  দিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জ -কোটালীপাড়া সড়কে কাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় গোপালগঞ্জ -কোটালীপাড়া সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে গোপালগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দুপুর পৌনে ২টায় গোপালগঞ্জের পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চে এনসিপি আয়োজিত সমাবেশে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। সমাবেশ স্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা ও সড়কের পাশের দোকানিরা জানিয়েছেন, মঞ্চে থাকা সাউন্ড বক্স, মাইক, চেয়ার ভাঙচুরসহ উপস্থিত এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। সেখানে বেশ কয়েকটি ককটেলও বিস্ফোরণ করা হয়।

তবে এনসিপির নেতাকর্মীর ও পুলিশ পরে ওই হামলাকে প্রতিহত করে এবং মঞ্চ দখলে নেয়। এর কিছু সময় পর দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমাবেশ স্থলে পৌঁছান। পরে ‘আবু সাঈদ, মুগ্ধ; শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’- এসব স্লোগানে মুখরিত হয় গোপালগঞ্জ পৌরপার্ক।

এরপর সমাবেশস্থলে পৌঁছান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। গোপালগঞ্জে সমাবেশ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় হামলার মুখে পড়েছে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের গাড়িবহর। শহরের সমাবেশস্থল থেকে বের হওয়ার পথেই কেন্দ্রীয় নেতাদের বহনকারী গাড়িবহরের ওপর ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সেই সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে পুলিশ। পুলিশ ও র‍্যাবের পাহারায় এনসিপির নেতাদের শহর থেকে বাইরে বের করার চেষ্টা করা হলেও ব্যাপক হামলার মুখে তাদের আবার শহরে ফিরিয়ে আনা হয়। কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনীর টহল টিম সেখানে এলে তারাও হামলার মুখে পড়ে।

পরে এনসিপির নেতাকর্মীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কম্পাউন্ডের ভেতরে আশ্রয় নেয়। এরপর দুপুর ৪টার দিকে এনসিপির নেতাকর্মীদের সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে গোপালগঞ্জ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) গোপালগঞ্জে পরিস্থিতি থমথমে। শহর অনেকটাই সুনসান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া বাইরে তেমন মানুষ দেখা যায়নি।

গোপালগঞ্জ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ৪ জন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও প্রশাসনের আর কোনও পক্ষ থেকে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনা জানতে গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানকে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Source link

Related posts

২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধায় মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ

News Desk

লঞ্চডুবি ঘটনায় কার্গো জাহাজের ৫ জন রিমান্ডে, ৯ জন কারাগারে

News Desk

দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ইন্টারনেট ব্যবসায়ী নিহত

News Desk

Leave a Comment