এক রাতেই পুড়ে শেষ হয়ে গেছে কৃষকের প্রায় ৫০০ বিঘা জমির ফসল। শত শত কৃষকের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে ফসলের মাঠ। ঝিনাইদহের মহেশপুরে অবৈধ ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় মাঠের পর মাঠ ফসল পুড়ে গেছে বলে কৃষকদের অভিযোগ।
এ ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ইটভাটা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করেছেন মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা।
শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বেলেমাঠ গ্রামের দিগন্তজোড়া মাঠে কৃষকের বুকফাটা কান্না আর হাহাকার। মাঠে আবাদ হচ্ছে পটল, ড্রাগন, কচু। ধানের আবাদ করতে দেওয়া হয়েছে শত শত বীজতলা। শুক্রবারও সব ঠিক ছিল। কিন্তু এক রাত পরই গ্রামের গ্রামীণ সড়কের পাশে অবৈধ ইটভাটা স্টোন ব্রিকস থেকে গ্যাস ছাড়লে তা ছেয়ে যায় ফসলের মাঠের পর মাঠ। শনিবার সকালে কৃষক মাঠে এলে দেখতে পান সকল ফসল পুড়ে গেছে। মাঠের প্রায় আড়াই কিলোমিটারজুড়ে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় পথে বসতে চলেছেন স্থানীয় অন্তত ২০০ জন কৃষক।
তাদের অভিযোগ, স্টোন ব্রিকস নামের ওই ইটভাটা কোনো নিয়মনীতি না মেনে দিনের পর দিন কালো ধোঁয়া ছাড়ছিল। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব চললেও কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে ক্ষোভ জানান তারা। এ ঘটনায় তারা ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি ইটভাটা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত সন্টু মিয়া বলেন, ‘শনিবার সকালে মাঠে গিয়ে দেখি চোখমুখ জ্বলছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম রাতের বেলা স্টোন ব্রিকস ইটভাটা থেকে গ্যাস ছেড়েছে। সেই গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে সারা মাঠ। পুড়ে গেছে মাঠের পর মাঠ ফসল। এ ক্ষতি পোষানোর নয়।’
কৃষক সাইফুল ইসলাম রলেন, ‘ইটভাটার কালো ধোঁয়া আর গ্যাসে মাঠের সব ফসল শেষ হয়ে গেছে। ড্রাগন ফল গাছ, শিম গাছ, তামাক পাতা, কচু, ঝাল গাছ, কলাগাছ, মাল্টা, পেঁপে সব পুড়ে গেছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’
কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, ‘আমি ঋণ নিয়ে ১০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের আবাদ করেছি। তার মধ্যে কলা, কচু, পেয়ারা, পেঁপে সব শেষ হয়ে গেছে।’
কৃষক রজব আলী বলেন, ‘মাঠের সব কলাগাছ পুড়ে গেছে। শুক্রবার সব ঠিকঠাক ছিল। শনিবার দেখি সব পুড়ে গেছে।’
কৃষক খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ৫০০ বিঘা জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। আমাদের এ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তা না হলে দুই শতাধিক কৃষক পথে বসবে।’ তাদের মতো করে সারা মাঠে কৃষকের হাহাকার আর কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।
এদিকে, খবর পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মাঠ পরিদর্শন করেছেন মহেশপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইয়াসমিন সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আজকে সকালে আমি ফোনে জানতে পারি ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় মহেশপুর বেলে মাঠে কৃষকের প্রায় ৫০০ বিঘা ফসলের জমির ক্ষতি হয়েছে। ড্রাগন, মুখি কচু, মরিচ, পেঁপে, কলাগাছ, পটলসহ সকল ফসলের পাতা পুড়ে গেছে। এতে করে এসব ফসলের ফলনে বড় একটা প্রভাব পড়বে। কৃষকের কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে তার একটা তালিকা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
এ ব্যাপারে স্টোন ব্রিকস ইটভাটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।