আসন বিন্যাসের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ
বাংলাদেশ

আসন বিন্যাসের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে বিজয়নগর উপজেলায় চান্দুরা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিক্ষুব্ধ উপজেলাবাসী। আজ রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার থেকে এই অবরোধ কর্মসূচি চলছে। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশে ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আটকা পড়েছে অসংখ্য যানবাহন। দুর্ভোগে পড়েছেন পরিবহনের যাত্রী ও চালকরা।

স্থানীয়রা জানান, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি আসনসহ দেশের মোট ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়ে গত ৩০ জুলাই প্রাথমিক গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। নতুন গেজেটে বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন- হরষপুর, চান্দুরা ও বুধন্তী ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে যুক্ত করা হয়। পরে গত ২৪ আগস্ট বিজয়নগরবাসীর অক্ষুণ্নতার পক্ষে আবেদনের আপিল শুনানি হয়। আপিল শুনানির পর হরষপুর ইউনিয়নকে আগের অবস্থায় রেখে বাকি দুটি ইউনিয়ন চান্দুরা, বুধন্তীকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ বিজয়নগর উপজেলাবাসী ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে দুর্ভোগে পড়েন মহাসড়কে চলাচলরত পরিবহনের যাত্রী ও চালকরা।

পরিবহন যাত্রী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে মহাসড়কে আটকা পড়ে আমাদের অবস্থা নাজুক। প্রশাসন কী করছে আমরা তা জানি না। সরকারের উচিত জনগণের দুর্ভোগের বিষয় অগ্রাধিকার দিয়ে সমস্যা সমাধান করা।’

পরিবহন যাত্রী ও কলেজশিক্ষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘দেশে আইনশৃঙ্খলা আছে বলে মনে হচ্ছে না। দুই তিন ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ থাকবে, আর তারা কোনও পদক্ষেপ নেবে না, এটা হতে পারে না।’

ট্রাকচালক আবুল খায়ের বলেন, ‘ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে এসেছি হবিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে যাবো। দুই ঘণ্টার ওপর হয়েছে আটকা পড়ে আছি। জানি না কখন অবরোধ প্রত্যাহার হবে, আর আমরা গন্তব্যে পৌঁছাবো।’

বাসচালক মামুন মিয়া বলেন, চালক যেমন দুর্ভোগে আছে, তারচেয়ে বেশি দুর্ভোগে আছে যাত্রীরা। এটা দুঃখজনক। দাবি থাকলে তারা অফিস, আদালত, নির্বাচন কমিশনে গিয়ে করতে পারে। মহাসড়কে অবরোধ করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কেন?’ তিনি প্রশ্ন রেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিজয়নগরের তিনটি ইউনিয়ন পুনর্বহালের দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. ইমাম হোসেন বলেন, ‘গত ২৪ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিচ্ছিন্ন তিন ইউনিয়নের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আপিল শুনানি শেষে গত ৪ সেপ্টেম্বর হরষপুর ইউনিয়নকে আগের অবস্থায় রেখে বুধন্তী এবং চান্দুরা ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এতে বিজয়নগরবাসী ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা কোনোভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সঙ্গে যেতে চান না। তারা বিজয়নগরের সঙ্গে অর্থাৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সঙ্গে থাকতে চান। উপজেলাবাসীর দাবি না মানা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এই আন্দোলন চলবে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ বলেন, ‘বিজয়নগরকে  বিচ্ছিন্ন করার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা দায়ী।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘তিনি তার সুবিধার জন্য বিজয়নগর উপজেলার দুটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন সরাইলের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে বিএনপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাচ্ছেন। ভোটের অঙ্কের পাশাপাশি তার পৈতৃক নিবাস বুধন্তী ইউনিয়নের ইসলামপুরে হওয়ায় তিনি দুই দিক থেকে এর সুবিধা নিতে চাচ্ছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে শুনানির দিন রুমিন ফারহানার বাহিনী আমার ওপর হামলা করে। বিজয়নগরকে অক্ষুণ্ন রাখার দাবি কোনও নির্দিষ্ট দলের নয়। এটি পুরো বিজয়নগরবাসীর দাবি। এই দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে আছি এবং থাকবো।’

বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলন এবং অবরোধ রোধ করার লক্ষ্যে মহাসড়কে থেকে কাজ করছি। আন্দোলনকারীরা যেন কোনও ধরনের জ্বালাও-পোড়াও না করতে পারে সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

উল্লেখ্য, বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে বিচ্ছিন্ন দুটি ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা ৬০ হাজার।

Source link

Related posts

সড়কে কর্মরতদের ২৫% কানে কম শোনেন

News Desk

৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করে চলছে বিএনপির প্রোগ্রাম

News Desk

নাক চেপে স্কুলে প্রবেশ, দরজা-জানালা বন্ধ করে ক্লাস

News Desk

Leave a Comment