আমন ক্ষেতে পোকায় দিশেহারা কৃষক, বলছেন কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা নেই
বাংলাদেশ

আমন ক্ষেতে পোকায় দিশেহারা কৃষক, বলছেন কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা নেই

ময়মনসিংহে আমন ধানের ক্ষেতে ব্যাপকভাবে মাজরা পোকা আক্রমণ করেছে। এই পোকা দমনে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শীষ খেয়ে ফেলায় ধানগাছ মরে যাচ্ছে। বারবার কীটনাশক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। কৃষকদের অভিযোগ, পরামর্শের জন্য কৃষি বিভাগের কোনও কর্মকর্তার দেখা মিলছে না। পোকা দমন বা নিধনে কৃষি অফিসের কোনও ধরনের সহায়তা কিংবা পরামর্শ পাচ্ছেন না তারা।

চাষিরা জানিয়েছেন, ভালো ফলনের আশায় স্বপ্ন বুনে ছিলেন জেলার আমন চাষিরা। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাজরা পোকা। আক্রমণে ধানগাছ মরে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

সদর উপজেলার গোপালনগর গ্রামের সাইফুল ইসলাম চলতি মৌসুমে ২২ শতক জমিতে হাইব্রিড স্বর্ণা জাতের আমন আবাদ করেছেন। ক্ষেতে ধানের শীষ বের হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে অজানা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ফলে শীষ শুকিয়ে ধানগাছ মরে যাচ্ছে।

পোকা দমন করা না গেলে ধানের ফলনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে জানিয়ে সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমনের আবাদ গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে এবার ভালো হয়েছে। এখন শীষ বের হতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে পোকার আক্রমণ দেখা দিলো। পোকারা কচি শীষ খেয়ে ফেলার কয়েকদিন পর ধানগাছ মরে যাচ্ছে। প্রতিদিনই আক্রমণ বেড়েই চলছে। চারবার কীটনাশক ছিটিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এর ফলে ফলনে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাবছিলাম এবার ফলন ভালো হবে। সারা বছর ঘরের খাবারের জন্য ধান রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে লাভবান হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু এখন যে অবস্থা তাতে ধান ঘরে তোলাই কঠিন হয়ে যাবে।’

শুধু সাইফুল নন, জেলার অনেক কৃষকের ক্ষেতেই পোকা আক্রমণ করেছে। বারবার কীটনাশক দিয়েও কাজ হচ্ছে না। কৃষি বিভাগের কোনও কর্মকর্তার পরামর্শ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

একই এলাকার কৃষক আনসার আলী বলেন, ‘এলাকার বেশিরভাগ আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বারবার কীটনাশক দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। পরামর্শ নিতে কৃষি বিভাগের কাউকে পাচ্ছি না।’

জেলা সদরের আরেক কৃষক তালেব উদ্দিন বলেন, ‘এক ক্ষেতে আক্রমণের সপ্তাহখানেক পরে পাশের ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ছে পোকা। কীটনাশকেও এসব পোকা মরে না। আমরা এবার ক্ষতির মুখে পড়বো।’

পোকা দমনে কৃষকরা বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনও ধরনের সুফল পাচ্ছেন না বলে জানালেন আরেক চাষি মনির হোসেন। তিনি বলেন, ‘পোকা আক্রমণের কয়েকদিন পরই ধানগাছ শুকিয়ে খড়ে পরিণত হচ্ছে। এই খড় গরুও খায় না। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সঠিক কোনও পরামর্শ পাচ্ছি না। পেলে হয়তো কিছুটা রক্ষা পেতাম। কিন্তু মাঠে কৃষি কর্মকর্তাদের দেখা মিলছে না।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় দুই লাখ ৬৮ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাত লাখ ৮৬ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ময়মনসিংহ জেলার উপপরিচালক মো. এনামুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমন ক্ষেতে পোকা দমনে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠে থেকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। যেসব এলাকায় পোকার আক্রমণের কথা বলা হচ্ছে, সেই এলাকার কৃষকরা হয়তো কৃষি কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানাননি। এরপরও আমরা অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। পাশাপাশি ওসব এলাকায় কৃষি অফিস থেকে দ্রুত অফিসার পাঠিয়ে পোকা দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যাতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’

Source link

Related posts

ঈদের ছুটিতে খাগড়াছড়িতে বেড়েছে পর্যটক

News Desk

করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের উর্ধগতি

News Desk

কিশোরগঞ্জে করোনায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪ জনের মৃত্যু

News Desk

Leave a Comment