‘আদালতে মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন না, হাত জোড় করে দাঁড়াবেন না’
বাংলাদেশ

‘আদালতে মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন না, হাত জোড় করে দাঁড়াবেন না’

আসামির কাঠগড়ার সামনে একটি কাগজে লেখা, ‘হাত জোড় করে দাঁড়াবেন না, স্বাভাবিক থাকুন’। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিদের উদ্দেশে এই লেখা সংবলিত কার্ডটি টানিয়েছেন বিচারক। পাশাপাশি বিচারকের এজলাসের সামনে আরেকটি কাগজে লেখা, ‘অনুগ্রহ করে মাথা নত করে কুর্নিশ করবেন না’। আইনজীবীদের উদ্দেশে এই কার্ডটি টানানো হয়েছে। এই লেখা সংবলিত দুটি কার্ড আইনজীবী এবং বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বিষয়টিকে মহতী উদ্যোগ বলছেন আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা।

মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাসের চিত্র এটি। এই আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরান গত ১৬ আগস্ট এই দুটি কার্ড কাঠগড়ায় এবং এজলাসের সামনে টানিয়ে দেন। ১৭ আগস্ট বিচার-কার্যক্রম শুরু হলে কার্ড দুটি আইনজীবী, আসামি এবং বিচারপ্রার্থীদের নজরে আসে। এরপরই শুরু হয় আলোচনা এবং প্রশংসা। এরই মধ্যে এজলাসে টানানো দুটি কার্ডের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন কেউ কেউ। এসব পোস্ট শেয়ার করে অনেকে প্রশংসা করেছেন। সেখান থেকে বিষয়টি সবার মাঝে ছড়িয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. সুমন ভূঁইয়া বলেন, ‘সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরান স্যার এসব পছন্দ করেন না। কোনও আসামি কাঠগড়ায় হাত জোড় করে দাঁড়ালে হাত নামিয়ে নিতে বলেন। অনেক সময় আসামি ও বিচারপ্রার্থীদের তিনি বলেছেন, “আপনি আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য এসেছেন, হাত জোড় করছেন কেন। হাত নামিয়ে নেন, এভাবে আর করবেন না”। আবার অনেক সময় মাথা নত করে কুর্নিশ করেন আইনজীবীরা। তখন তাদেরও নিষেধ করেন। এরপরও একই কাজ অব্যাহত থাকায় কাঠগড়ায় এবং এজলাসের সামনে ওই লেখা সংবলিত কার্ড টানিয়ে দিতে বলেন। ওনার নির্দেশে গত ১৬ আগস্ট কাঠগড়ায় এবং এজলাসের সামনে কার্ড টানিয়ে দিয়েছি, যাতে সবাই সচেতন হন।’

দুটি কার্ডের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি শহীদ-ই-হাসান লিখেছেন, ‘আজ মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইফতি হাসান ইমরানের এজলাসে দুটি লেখা সংবলিত কার্ড চোখে পড়লো। বিচারকের এই উন্নত চিন্তা-ভাবনার বহিঃপ্রকাশ আমাকে মুগ্ধ করেছে। আদালতের আড়াইশ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সামন্তবাদী প্রথা ভেঙে দিলেন তিনি।’ তার এই পোস্টে এখন পর্যন্ত ৭৯ জন মন্তব্য করেছেন। তারা সবাই এটিকে যুগান্তকারী লেখা আখ্যা দিয়ে বিচারকের প্রশংসা করেছেন। কেউ কেউ স্যালুট জানিয়েছেন। 

মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাস

এদিকে, বিষয়টিকে বিচারকের মহতী উদ্যোগ বলছেন আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা। জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা এজন্য বিচারককে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র আইনজীবী কাজী নজরুল ইসলাম অসীম বলেন, ‘বিচারকের এমন মহতী লেখা আমার ভালো লেগেছে। আমি তাকে সাধুবাদ জানাই।’

জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. জাকারিয়া মোল্লা বলেন, ‘বিচারক যে লেখা সংবলিত দুটি কার্ড কাঠগড়ায় এবং এজলাসের সামনে টানিয়ে দিয়েছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মহতী উদ্যোগ।’

মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন

বিষয়টি আইনজীবী, আসামি এবং বিচারপ্রার্থীদের জন্য ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেছেন মুন্সীগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক জামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আসামিরা সাধারণত আদালতে এসে ভীতসন্ত্রস্ত থাকেন। অনেক বিচারপ্রার্থী ভয়ে কথা বলতে পারেন না। এখন থেকে আদালতে এসে এই দুটি কার্ড দেখলে অনেকে সাহস পাবেন, আদালত এবং বিচারকের প্রতি আস্থা বেড়ে যাবে। ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা বাড়বে।’

Source link

Related posts

শিক্ষাখাতকে এগিয়ে নিতে উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজছে সরকার

News Desk

লাভ বুঝলেও স্বাস্থ্যের ক্ষতি বোঝেন না তামাক চাষিরা

News Desk

৪৫০ টাকার জন্য ভ্যানচালক মিজানকে হত্যা: পুলিশ 

News Desk

Leave a Comment