১৬ বছর ধরে ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত বয়ে বেড়ান তারা
বাংলাদেশ

১৬ বছর ধরে ঘূর্ণিঝড় আইলার ক্ষত বয়ে বেড়ান তারা

১৬ বছর আগে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড় আইলা। আইলায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে ছিল পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়া এবং জলোচ্ছ্বাসে এলাকা প্লাবিত হওয়া। এ ছাড়া মানুষের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কৃষি, মৎস্যসম্পদসহ অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এমনকি মানুষের প্রাণহানিও ঘটেছিল। এর মধ্যে খুলনার কয়রার পাথরখালীতে একটি সড়ক ভেঙে খাল সৃষ্টি হয়। এতে আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ে। সেখানে আজো তৈরি হয়নি সেতু। ফলে ১৬ বছর ধরে আইলার ক্ষত ও যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এসব গ্রামের হাজারো মানুষজন। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আইলায় পাথরখালীর একটি সড়ক ভেঙে খাল সৃষ্টি হয়েছিল। এতে কয়েক গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের বারবার তাগিদ দিলেও এত বছরও কোনও সুরাহা পাননি স্থানীয় লোকজন। ফলে খালটির দুই পাড়ের মানুষ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষিকাজসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এতদিন নৌকাতে পারাপার অথবা ঘুরে আসতে হতো তিন-চার কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ। খালের দুই পাড়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও দৈনন্দিন হাটবাজারের জন্য নৌকাই ছিল একমাত্র ভরসা। এখন সেটিও নেই।

২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলা প্রশাসন ‘লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ প্রকল্পের আওতায় খালের ওপর একটি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছিল। ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর লোহার পাত ও টিনের শিট বসিয়ে তৈরি করা হয় ৩১১ ফুট দীর্ঘ সেতু। ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হলে আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষের মাঝে দেখা দেয় স্বস্তি। কিন্তু সেই স্বস্তি টিকলো না ছয় মাসও। লবণাক্ত পানিতে লোহার সেতুতে মরিচা ধরে। টিনের পাত উঠে যায়। হাতল ভেঙে পড়ে। এখন সেতুর নিচের ড্রামগুলোই শুধু পানিতে ভাসছে। ওপরে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। খালের পানিতে ভাসছে প্লাস্টিকের ড্রাম। তার ওপর ছিন্নভিন্ন লোহার কাঠামো। ঝুঁকি নিয়েই এখন সেতু দিয়ে চলাচল করতে হয়।

যাতায়াতে ভোগান্তির কথা জানিয়ে নয়ানী গ্রামের বাসিন্দা রেশমা বেগম বলেন, ‘দুই কিলোমিটার দূরে সাদা পদ্ম পুকুর পানির একমাত্র উৎস। ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। পুকুরে যাওয়ার রাস্তা একেবারে হারিয়ে যায়। তখন থেকে খাল সাঁতরে কিংবা দূরের চিংড়ি ঘেরের আইল ঘুরে পানি আনতে হতো। ড্রাম সেতু করায় স্বস্তি আসে। কিন্তু ছয় মাসও টেকেনি। এখন ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।’

একই গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জনা রায় বলেন, ‘আমাদের এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বেশি। ড্রামের সেতু নষ্ট হওয়ায় পারাপারে এখন অনেক কষ্ট করতে হয়। ভাঙা সেতু পার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হন। এখানে একটি সেতু কিংবা রাস্তা হলে ‍উপকার হতো আশপাশের গ্রামের মানুষের।’

মোল্লাবাড়ি গ্রামের কাকলী বেগম বলেন, ‘আইলার সময় রাস্তা ভেঙে খাল হয়ে গেছে। এরপর থেকে সাঁতরে পার হতে হতো। ড্রামের সেতু হওয়ায় স্বস্তি পাইলাম। কিন্তু এখন আগের মতো ভোগান্তি পোহাতে হয়।’

মহেশ্বরীপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু মুসা বলেন, ‘আমরা এখানে শুরু থেকেই একটি রাস্তা তৈরির দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু তা না করে ড্রামের সেতু বানানো হলো। টিনের পাত এমন নিম্নমানের ছিল যে, ছয় মাসেই উঠে গেছে। অথচ ১৮ লাখ টাকায় মজবুত রাস্তা করা যেতো। এখন পুরো টাকাটাই জলে গেলো।’

এ বিষয়ে মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী বলেন, ‘মানুষের কষ্ট লাঘবে আমরা ভেবেছিলাম ভাঙা সেতু কাঠ দিয়ে মেরামত করে দেবো। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম, সেটা সম্ভব নয়। কারণ সব ভেঙেচুরে পড়ে গেছে। এখন এখানে সেতু কিংবা রাস্তা করতে হলে বড় বাজেট লাগবে।’

এ ব্যাপারে জানতে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল বাকীকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

Source link

Related posts

লকডাউনের প্রভাব পড়েছে টাঙ্গাইলে নৌকার হাটে

News Desk

চুয়াডাঙ্গা কারাগারে নারী বন্দির মৃত্যু

News Desk

চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু

News Desk

Leave a Comment