হিলিতে বোরো ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা
বাংলাদেশ

হিলিতে বোরো ধানে মাজরা পোকার আক্রমণ, দুশ্চিন্তায় চাষিরা

আলুর লোকসান কিছুটা কাটিয়ে উঠতে দিনাজপুরের হিলিতে বোরো ধানে মাজরা পোকার আক্রমণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। ধানের শীষ বের হওয়ার পর পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খরচ তোলা নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। তবে বর্তমানে অধিকাংশ জমির ধান বের হয়ে যাওয়ায় পোকার আক্রমণে উৎপাদনে তেমন একটা ক্ষতি হবে না বলে দাবি কৃষি বিভাগের।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার সাত হাজার ৬২৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৩৪ হাজার ৯৯৪ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও কয়েকটি এলাকায় আংশিক সেচের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া কিছু জায়গায় পোকার আক্রমণের খবর পাওয়ার পর কৃষি অধিদফতর থেকে ওই সব এলাকার কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা করা হচ্ছে।

কৃষকরা বলছেন, ইতিমধ্যে অধিকাংশ জমির ধান বের হয়েছে। আগাম লাগানো কিছু কর্তনও শুরু হয়েছে। আগাম ধানে কোনও পোকার আক্রমণ না থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে যারা আলু ও সরিষা তুলে বোরো আবাদ করেছেন, সেসব জমির ধান সবেমাত্র বের হতে শুরু করেছে। পুরোপুরি বের হতে আরও ১৫ দিন সময় লাগবে। এই সময়ে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। মাজরা পোকা ধান গাছের গোড়া কেটে দিচ্ছে। এতে শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। কয়েকবার কীটনাশক স্প্রে করেও পোকার আক্রমণ থেকে রেহাই মিলছে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন অনেক কৃষক।
 
হিলির গোহাড়া গ্রামের কৃষক রতন কুমার বলেন, ‘এবার আলু আবাদ করে দাম না পাওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। ভেবেছিলাম ধান করে সেই লোকসান কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবো। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি। যারা আগাম ধান করেছিলেন তাদের বেশ ভালোই হয়েছে। পোকার আক্রমণ নেই। কিন্তু আমরা যারা আলু ও সরিষা লাগিয়েছিলাম, সেসব তুলে যারা ধান রোপণ করেছি তাদের অবস্থা খারাপ। রোপণের পর থেকে তিন-চারবার কীটনাশক স্প্রে করলাম। যখন শীষ বের হলো ঠিক তখন মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। শীষ কেটে দেওয়ায় শুকিয়ে যাচ্ছে ধান গাছ। এতে ফলন কমে যাবে। আমরা আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবো।’    

একই গ্রামের কৃষক উৎপল কুমার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শীষ বের হওয়ার আগে কীটনাশক স্প্রে করেছি। পরেও করেছি। তারপরও পোকার আক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। এভাবে যদি শীষ মরে যায় ফলন কমে যাবে। যেখানে বিঘা প্রতি ২০-২২ মণ হওয়ার কথা সেখানে ১৫-১৬ মণ হবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি আমরা। যে হারে সার ও কীটনাশকের জন্য খরচ হয়েছে, তা উঠাতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে।’

একই দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে জালালপুর গ্রামের কৃষক ইউসুফ হোসেন বলেন, ‘আমার ধানের অবস্থা খুব খারাপ। তিন-চারবার ওষুধ দিয়েও পোকার আক্রমণ ঠেকাতে পারছি না। একে তো সার ও কীটনাশকের দাম বেশি, তার ওপর পোকার আক্রমণে উৎপাদন কমে যাবে। এতে আলুর মতো লোকসানে পড়তে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিছু কিছু জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। বিশেষ করে যেসব জমি ছায়াযুক্ত, সেগুলোতে এই আক্রমণ বেশি। এজন্য নিয়মিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পরিদর্শন করছেন। কৃষকদের আলোকফাদ ব্যবহার ও নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে অধিকাংশ জমির ধান বের হয়ে গেছে। তাই মাজরা পোকার আক্রমণে উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না। এ ছাড়া আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন ভালো হবে বলে আশা করা যায়। চলতি মৌসুমে উপজেলায় সাত হাজার ৬২৪ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৩৪ হাজার ৯৯৪ টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।’

Source link

Related posts

নির্মাণ কাজ লকডাউনের নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত : কাদের

News Desk

সেই দম্পতির মৃত্যুর জন্য পরকীয়া প্রেমিকই দায়ী

News Desk

স্বাস্থ্যবিধি না মানায় রাজধানীর পল্টনে চায়না টাউন মার্কেট বন্ধ

News Desk

Leave a Comment