দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছর পর নীলফামারীতে ‘নীলাম্বরী’ নামের একটি শিশুপার্কের যাত্রা শুরু হয়েছে। নীলফামারী নাম অনুসারে পার্কের নামকরণ করা হয় ‘নীলাম্বরী’ শিশুপার্ক। পার্কটি গত ২১ ফেব্রুয়ারি জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।
জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরসংলগ্ন এলাকায় শিশু পার্কটি ছায়াঘেরা শীতল ও মনোরম পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে। এটি দীর্ঘদিনের দাবি ছিল নীলফামারীবাসীর।
রাজনৈতিক নেতাদের দৌরাত্ম্য ক্ষমতার দাপট ও পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পৌরসভার পেছনে পড়ে ছিল রাইডের উপকরণগুলো। গত ৫ আগস্টের পর পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাইদুল ইসলামের উদ্যোগে শিশুদের বিনোদনের জন্য চালু করা হয় পার্কটি। ৫৮ শতাংশ জমির ওপর পার্কটির নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বলেন, ‘শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে নির্মিত শিশুপার্কে নানা খেলাধুলা ও রাইডস রয়েছে। যা ঢাকা শিশুপার্কের আদলে তৈরি করা হয়েছে। ওই দিন (২১ ফেব্রুয়ারি) শিশুপার্কের ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক নায়িরুজ্জামান। পরে অসংখ্য শিশু প্রথম দিনের আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠে শিশুপার্ক পেয়ে। এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অনেকে শিশুপার্ক স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। নীলফামারীর নামানুসারে “নীলাম্বরী” নামকরণ করা হয় পার্কটির।’
ঢাকা থেকে আগত শিশু তাসদিক খান বলেন, ‘আমার নানুর বাসায় মাঝেমধ্যে আমার ছোট বোনকে নিয়ে বেড়াতে আসি। কিন্তু সরকারিভাবে এ শহরে কোনও পার্ক ছিল না। এখন শিশুপার্ক দেখে আমরা অনেক খুশি। এখন থেকে নানু ভাইয়ের সঙ্গে ঘুরতে এসে শিশুপার্কে খেলাধুলা ও রাইডে উঠতে পারবো। এতদিন কোথায়াও বেড়ানোর সুযোগ ছিল না। শুধু বাড়ির ছাদ, ছাদবাগান আর ঘরে বসে থাকতে হতো।’
জেলা পুলিশ লাইনস স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী অন্তর বলেন, ‘আমরা ছোট থেকে শিশুপার্কের অভাববোধ করতাম। এ নিয়ে অভিভাবকদের কত যে দাবি ছিল। এখন যেখানে পার্কটি চালু হলো একসময় সেখানে পার্কের অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরে কী কারণে বন্ধ হয়েছিল, তা আর বলতে পারি না। অবশেষে শিশুপার্কের আশা পূরণ করলো জেলা প্রশাসন।’
পৌর শহরের নিউবাবুপাড়ার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৮৩ সালে নীলফামারী জেলা শহর হলেও শিশু-কিশোরদের বিনোদনের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। বিকাল হলে শহরের বড় মাঠ, তিস্তা ক্যানেল ও নীলসাগরে শিশুদের নিয়ে যেতে হতো। দীর্ঘদিন পরে হলেও আমরা শিশুপার্ক পেয়ে খুবই আনন্দিত। এজন্য আমরা পৌর প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই।’
শিশুপার্কের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা খাতিয়ার রহমান বলেন, ‘পার্কটি শিশুদের জন্য বিনামূল্যে উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে নাগরদোলায় উঠতে ৩০ টাকা ও দোলনায় ১০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত এভাবে চলবে। পার্কের কাজ এখনও চলমান রয়েছে।’
চিত্রশিল্পী ওয়াশিম বলেন, ‘শিশুদের আকৃষ্ট করতে দেয়ালে দেয়ালে বাঘ, হরিণ, হাতি, দোয়েল ও কবি-সাহিত্যিকদের ছবি আঁকা হচ্ছে। সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি শিশুরা ছবিগুলো সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারবে। এজন্য এক মাস ধরে নানা ধরনের ছবি এঁকে যাচ্ছি।’
জেলা প্রশাসক নায়িরুজ্জামান বলেন, ‘শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য বিনোদনের দরকার আছে। শিশুরাই আগামী দিনের অহংকার ও ভবিষ্যৎ। তাদের কথা বিবেচনা করে শিশুপার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে হলেও শিশুদের জন্য পার্কটি উন্মুক্ত করে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে শিশুপাকর্টি স্থাপনের প্রকল্প হাতে নেয় পৌরসভা। সে সময়ে জমির মালিকানা নিয়ে জেলা পরিষদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে উচ্চ আদালতে মামলা গড়ালে থেমে যায় সে প্রকল্প। এরপর সে মামলার নিষ্পত্তি হলেও উদ্যোগের অভাবে নির্মাণ করা হয়নি শিশুপার্কটি। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে মামলার ৬ বছর পর সে প্রত্যাশা পূরণ হলো।