Image default
বাংলাদেশ

সিস্টেম লসের মূল্য ৩২০ কোটি টাকা

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির সিস্টেম লস (ঘাটতি) গত বছর ছিল ২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা প্রায় ৩২০ কোটি, যা বার্ষিক ক্ষতি হিসাবে দেখাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। আর এই সিস্টেম লসের মূল কারণ অবৈধ সংযোগ। অবৈধ সংযোগ দিয়ে থাকেন প্রতিষ্ঠানটির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

তিতাসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে তিতাস ১৬ হাজার কোটি টাকার গ্যাস বিক্রি করেছে। কিন্তু যে পরিমাণ গ্যাস তারা বিতরণ করেছে তার দামের চেয়ে এই অর্থ ৩২০ কোটি টাকা কম। একেই তিতাস সিস্টেম লস বা ঘাটতি হিসেবে দেখায়।

এই সিস্টেম লস কেন, জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, এর প্রধান কারণ অবৈধ গ্যাস সংযোগ। এ কারণেই সিস্টেম লস কমছে না। এটা বন্ধ করা গেলেই সিস্টেম লস কমে আসবে। তিনি বলেন, ‘একে এবার আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে অভিযানে নেমেছি। তিতাসের আওতাভুক্ত এলাকায় কোনো অবৈধ গ্যাস সংযোগ থাকবে না। ’

রাজধানী ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে তিতাসের কী পরিমাণ অবৈধ সংযোগ আছে তার কোনো হিসাব তিতাসের কাছে নেই। তিতাসের আওতাভুক্ত অন্য জেলাগুলোতেও অবৈধ সংযোগ কম নয়। বছরের পর বছর অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের অভিযান চলে। কিন্তু কয়েক দিন পর আবার তিতাসের কর্মীরাই টাকার বিনিময়ে বিচ্ছিন্ন সংযোগ চালু করে দেন।

তিতাসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার ও টঙ্গীতে অবৈধ ২১ হাজার ৯১১টি চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বকেয়া ও অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের কারণে ৪১টি শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

বর্তমানে তিতাসের বিভিন্ন শ্রেণির মোট গ্রাহক রয়েছে ২৮ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৩। এর মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ২৮ লাখ ৫৬ হাজার ২৪৭। বাণিজ্যিক গ্রাহক ১২ হাজার ৭৬, শিল্প পাঁচ হাজার ৩২২, সিএনজি স্টেশন ৩৯৬, ক্যাপটিভ পাওয়ারে এক হাজার ৭১০, সার কারখানায় তিনটি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৪৭ গ্রাহক আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আবাসিকে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ থাকায় অবৈধ সংযোগ দেওয়ার প্রবণতা আরো বেড়েছে। তিতাসেরই অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই কাজে জড়িত। ঢাকার আশপাশের শহরগুলোতে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন সরকারি দলের নেতাকর্মীরাও। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও, সাভারও গাজীপুরের কিছু এলাকায় বছরের পর বছর মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রকাশ্যে অবৈধ সংযোগ বিক্রি করা হয়েছে। পত্রিকায় লেখালেখি হলে কিছু সংযোগ বিচ্ছিন্নও করেছে তিতাস।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, মানহীন, জরাজীর্ণ ও জোড়াতালির পাইপ দিয়ে চলা গ্যাস থেকে আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে যে সংখ্যক অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে, তার এক-তৃতীয়াংশই গ্যাসের পাইপলাইনের লিকেজ থেকে।

বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকাজুড়ে তিতাস গ্যাসের কার্যক্রম বিস্তৃত। ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে সাত হাজার কিলোমিটার। তিন-চার দশকের পুরনো এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েক লাখ অবৈধ সংযোগ। তিতাসের বিতরণব্যবস্থায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার অবৈধ লাইন রয়েছে বলে মনে করা হয়।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট করে জানিয়েছেন, ‘কেউ যদি ভাবেন তিনি অবৈধ লাইন বা সংযোগ ব্যবহার করলেও টাকা বা ক্ষমতার জোরে পার পেয়ে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। যেকোনো মূল্যে জনগণের সম্পদ বাঁচাতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থানে থাকবে। ’

তথ্য সূত্র : https://www.kalerkantho.com/

Related posts

পুলিশ পরিচয়ে পিকআপ ছিনতাইয়ের চেষ্টা, গ্রেফতার ২

News Desk

নকল কিটসহ অবৈধ মেডিকেল পণ্য জব্দ, আটক ৯

News Desk

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির জেলা আহ্বায়কসহ ৫ নেতা আটক

News Desk

Leave a Comment