শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা
বাংলাদেশ

শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

দিনাজপুরের হিলিতে অধিকাংশ জমির ধান পেকে গেছে। এখন ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। কিন্তু অতিরিক্ত মজুরি ও শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন তারা।

নীলফামারী থেকে হিলিতে ধান কাটতে আসা শ্রমিক আমিনার রহমান বলেন, ‌‘গতবছর ধান ভালো থাকায় আমরা মাঠ থেকে কেটেছিলাম আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা করে। তারপরও আমাদের পুষিয়েছে। কিন্তু এবারে ঝড়-বৃষ্টিতে ধান হেলে পড়ায় কাটতে বেশি সময় লাগছে। এ কারণে ৫-৬ হাজার টাকা বিঘা ধান কেটেও পোষাচ্ছে না। আগে যেখানে একবিঘা জমির ধান কাটতে ৪-৫ জন লাগতো সেখানে এখন ৮-১০ শ্রমিক লাগছে। আগে আমরা যারা একসঙ্গে ধান কাটতাম তাদের অনেকেই গার্মেন্টসে কাজে গিয়েছে। এ কারণে লোকের সংকট রয়েছে। সেই সঙ্গে চাল-ডাল-তেলের দাম বাড়ায় ধান কাটা ও মাড়াইয়ের খরচ বেড়ে গেছে।’

হিলির ইসমাইলপুরের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘মাঠের ধান সব পেকে গেছে। এদিকে বিভিন্ন জায়গায় ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। তাই দ্রুত মাঠ থেকে ধান কেটে নিতে পারলেই বাঁচি। কিন্তু প্রতিবছর বাইরে থেকে ধানকাটার শ্রমিক আসলেও এবার আসেনি। এতে ধান কাটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছি। কিছু শ্রমিক পাওয়া গেলেও তারা একবিঘা জমির ধান কাটতে ৬-৭ হাজার টাকা চাচ্ছেন। বোরো আবাদে পানি থেকে শুরু করে সবকিছু কিনতে হয়। তাতে করে বোরো ধান আবাদে যে খরচ, সব টাকা যদি ওদেরকেই দিতে হয়, তাহলে আমরা কী খাবো?’

কৃষক রাজু হোসেন বলেন, ‘ঈদের পরের দিন থেকে শ্রমিকের জন্য বাসস্ট্যান্ড রেলস্টেশনে ঘোরাঘুরি করছি। কিন্তু কোনও লোক পাচ্ছি না। শ্রমিকের অভাবে কাটতে না পেরে আমার ১৪-১৫ বিঘা জমির ধান বাতাসে হেলে পড়েছে।’

একই গ্রামের কৃষক শাহাদৎ হোসেন বলেন, ‘এবার ৯ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছিলাম। আবহাওয়া ভালো থাকায় ধান ভালোই হয়েছে। প্রতি বিঘাতে ১৮ থেকে ১৯ মণ করে ফলন হয়েছে। কিন্তু ধানকাটার শ্রমিকের বাড়তি মূল্যের কারণে চাষাবাদ করে লাভবান হতে পারছিনা। বর্তমানে একবিঘা জমির ধান কাটতে শ্রমিককে দিতে হচ্ছে ৫-৬ হাজার টাকা করে। এর ওপর মাড়াই খরচ তো রয়েছে।’

ঝড়-বৃষ্টিতে ধান হেলে পড়ায় কাটতে বেশি সময় লাগছে

ধানের আড়তদার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা মাঠ থেকে ধান কাটতে পারছেন না। এ কারণে ধানের আমদানি তুলনামূলক কম হচ্ছে। তবে আশা করছি, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ধানের আমদানি বাড়বে।বর্তমানে জিরা ধান কিনছি ৯৮০ থেকে ৯৯০ টাকা মণ দরে। বাঁশমতি ধান এক হাজার টাকা মণ। মোটা ধান কিনছি ৭৫০ টাকা মণ দরে।’

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে উপজেলায় সাত হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়। ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলন আশানুরূপ হচ্ছে। সেই সঙ্গে ধানের দাম ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। তবে ধান কাটতে একটু শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে কোনও কোনও এলাকায়। এক্ষেত্রে আমরা কৃষকদের আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধ করছি।’

Source link

Related posts

প্রমোশন দেয়া হলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের

News Desk

করোনায় আক্রান্ত চেয়ারম্যান ঘুরে বেড়াচ্ছেন এলাকা

News Desk

আগামী ১২-১৩ এপ্রিল ব্যাংক লেনদেন ১০টা-১টা

News Desk

Leave a Comment