রেলস্টেশনের আদলে মণ্ডপ, সঙ্গে ধান ও পাটের প্রতিমায় নতুন বার্তা
বাংলাদেশ

রেলস্টেশনের আদলে মণ্ডপ, সঙ্গে ধান ও পাটের প্রতিমায় নতুন বার্তা

প্রতি বছরই চমক নিয়ে আসে সাতক্ষীরার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ। তবে এবার যেন সব আলো কেড়ে নিয়েছে একাধিক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। পারুলিয়ার মণ্ডপটিতে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পারুলিয়া রেলস্টেশনের আদল, যার মূল উদ্দেশ্য সাতক্ষীরাবাসীর দীর্ঘদিনের রেললাইন চালুর দাবিকে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরা। এর পাশাপাশি জেলার অন্যান্য মণ্ডপে ধান ও পাটের তৈরি প্রতিমাও মুগ্ধ করেছে দর্শককে।

বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, পুরো পারুলিয়া মণ্ডপটি একটি রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম এবং বগি হিসেবে সাজানো হয়েছে। ওপরে লেখা রয়েছে ‘পারুলিয়া রেলওয়ে স্টেশন’ এবং বগির গায়ে লেখা ‘সুন্দরবন সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস’। এই অভিনব থিম দেখতে ইতোমধ্যে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। দক্ষিণ পারুলিয়ার রেল থিমের পাশাপাশি সাতক্ষীরা সদরে ব্রহ্মরাজপুরে ধানের তৈরি প্রতিমা ও কলারোয়ার উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়া সর্বজনীন পূজামণ্ডপে সোনালি আঁশ পাট দিয়ে গড়া প্রতিমা নজর কাড়ছে সবার।

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পারুলিয়া পূজা কমিটির সভাপতি পলাশ চন্দ্র মণ্ডল এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমরা প্রতি বছরই ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা করি। সাতক্ষীরা রেললাইনের জন্য মাপজোখের কাজ শেষ হয়ে গেছে এবং আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা “বাংলাদেশ রেলওয়ে পারুলিয়া রেলস্টেশন” নামে এই থিমটি তৈরি করে তা বাস্তবায়ন করেছি। এর মাধ্যমে আমরা দ্রুত সাতক্ষীরায় রেললাইন চালুর দাবিকে তুলে ধরেছি।’

তিনি আরও জানান, এই থিমটি তৈরি করতে তাদের তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে এবং পূজার অন্যান্য খরচ বাবদ সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। মণ্ডল আশা প্রকাশ করেন, রেলস্টেশন দ্রুত চালু হলে এই এলাকা অনেক এগিয়ে যাবে এবং মৎস্য খাত আরও বিকশিত হবে।

শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ থেকে পরিবারসহ আসা দর্শনার্থী অনাথ মণ্ডল রেল মণ্ডপটি দেখে মুগ্ধ। তিনি বলেন, ‘এই পূজা কমিটি প্রতিবারই নতুন নতুন কিছু করার চেষ্টা করে, এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সাতক্ষীরার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি রেললাইনের কথা মাথায় রেখেই তারা মণ্ডপটিকে এভাবে সাজিয়েছে। মণ্ডপটি দেখে খুবই ভালো লাগছে।’

সাতক্ষীরা শহরের ফেসবুক ব্যবহারকারী আল মুত্তাসিম বিল্লাহ সুমনের লেখাতেও একই আবেগ প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি মন্তব্য করেন, এটি সাতক্ষীরার পারুলিয়ার একটি পূজামণ্ডপের ছবি। এখানে রেলের আদলে পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। রেল নিয়ে সাতক্ষীরাবাসীর আবেগ ও স্বপ্নের কথা বলছি। অনেক জেলা আছে রেল চাওয়ার আগেই তারা পেয়ে গেছে, আর আমাদের সাতক্ষীরায় গত ৫৪ বছর ধরে শুধু পরিকল্পনায় চলছে।’

এদিকে, রেল আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নাহিদ হাসান নামে এক নেতা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সাতক্ষীরায় রেলওয়ে স্টেশনের আদলে তৈরি হলো পূজামণ্ডপ। রেল আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে যাবে।’

প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার উত্তর মুরারীকাটি পালপাড়া সর্বজনীন পূজামণ্ডপে সোনালি আঁশ পাট দিয়ে গড়া প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। এটি এক ভিন্নধর্মী শিল্পরূপ যা দর্শনার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।

অন্যদিকে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ৯ নম্বর ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ব্রহ্মরাজপুর সর্বজনীন পূজামণ্ডপে ধানের তৈরি প্রতিমা সকলের নজর কেড়েছে। এই অভিনব শিল্পকর্ম দেখতে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন অসংখ্য দর্শক।

উল্লেখ্য, এ বছর সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় মোট ৫৮৭টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব হচ্ছে। তার মধ্যে সাতক্ষীরা পৌরসভায় ১৮টিসহ সদর উপজেলায় ১০৬টি, তালা উপজেলায় ১৯৫টি, কলারোয়ায় ৪৪টি, শ্যামনগর উপজেলায় ৬৯টি, আশাশুনি উপজেলায় ১০৩টি, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৪৯টি ও দেবহাটা উপজেলায় ২১টি। জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপের সংখ্যা ৫৫টি। তার মধ্যে শ্যামনগরে ২০টি, কালিগঞ্জে ২টি, দেবহাটায় ৪টি, আশাশুনিতে ২৩টি, কলারোয়ায় ৬টি রয়েছে বলে জানান পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ।

Source link

Related posts

করোনোর প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া বন্ধ ঘোষণা

News Desk

করোনাকালীন চ্যালেঞ্জের বাজেট পাস হবে আজ

News Desk

আড়ত নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবর্ষণ, আহত ২৫

News Desk

Leave a Comment