Image default
বাংলাদেশ

রংপুরে ১০ হাজার হেক্টর জমির আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা

তিন দিনের টানা বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ আলু উৎপাদনের এলাকাখ্যাত রংপুরের পাঁচ জেলায় আলুক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ বৃষ্টিতে কমপক্ষে ১০ হাজার হেক্টর আলুক্ষেত ডুবে গেছে। এসব ক্ষেতের আলুতে পচন ধরে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ। পাশাপাশি সরিষাক্ষেত ও ধানের চারাসহ নানা ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবমিলিয়ে, অসময়ের এমন বৃষ্টিতে দিশেহারা কৃষকরা।

রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টায় ৫৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মাঘ মাসে এই ধরনের অবিরাম বৃষ্টিপাতের ঘটনা গত ৫০ বছরেও দেখা যায়নি বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে।

সরেজমিনে রংপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জেলার ছয় উপজেলার আলু ও সরিষাক্ষেত। এতে আলুতে পচন ধরার সম্ভাবনা বেশি। ফসল বাঁচাতে বৃষ্টিতে ভিজে আলুক্ষেত থেকে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন কৃষক।

নগরীর মাহিগঞ্জ, রঘু কলাবাড়ি এলাকার আলু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন জমিতে পানির প্রয়োজন ছিল না। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে আলু তোলার কথা ছিল। এই সময়ে এমন বৃষ্টি তাদের স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। পানিতে পচে যাবে তাদের এতদিনের শ্রম ও ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন।

মাহিগঞ্জের আলু চাষি মমতাজ উদ্দিন ও সোলাইমান আলী জানান, তারা পাঁচ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। তাদের আলুক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি সরানোর উপায় নেই। অধিকাংশ আলু পচে যাবে। এরপরও পানি সরানোর উপায় খুঁজছেন। শনিবার সন্ধ্যা থেকে আবারও বৃষ্টি শুরু হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৯৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অ্যাস্টারিকস, মিউজিকা, কার্ডিনাল, কারেজ, সাদিকা, গ্রানোলা, ডায়মন্ড, লরা, রোমানা ও সেভেন্টিসহ বিভিন্ন জাতের আলু রোপণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে ২২ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯৬ মেট্রিক টন আলুর উৎপাদন সম্ভব হতো বলে মনে করছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। যা দেশের মোট চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ।

কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে দুশ্চিন্তায় পড়তে হলো কৃষকদের। তারা চড়া সুদে এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছেন। ফলন ঘরে তুলতে না পারলে তাদের মহাবিপদে পড়তে হবে বলে জানিয়েছেন রঘু কলাবাড়ি এলাকার আলু চাষি আকলিমা, সালেহা, নবাব আলী ও জমির উদ্দিন।

রংপুর সদর উপজেলা পালিচড়া এলাকার আলু চাষি এনামুল হক বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে এ বছর পাঁচ একর জমিতে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ করে আলু চাষ করেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা ফসল ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু হঠাৎ করে তিন দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এখন পানির নিচে আলু। জানি না আলুর কী অবস্থা, আমাদের ভাগ্যে কী আছে।’

একই এলাকার আলু চাষি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সঠিক সময়ে কষ্ট ও ধারদেনা করে আলু রোপণ করেছিলাম। আলুর চারাগুলো ভালো পরিচর্যা করায় ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে আলুর ক্ষতি হয়েছে। এখনও ঠিক বলতে পারছি না, কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।’

মিঠাপুকুর উপজেলার চেংমারি এলাকার আলু চাষি মো. স্বাধীন বলেন, ‘এ বছর এক বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছি। এতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমেছে। এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী জেলায় ৯৭ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন উন্নত জাতের আলুর আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রংপুর জেলায় ৫১ হাজার ৮৪০ হেক্টর, নীলফামারীতে ২২ হাজার ১০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৯ হাজার ২২০ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ছয় হাজার ৫৯৫ হেক্টর এবং লালমনিরহাটে পাঁচ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘৫০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝড় বৃহস্পতিবার রাত থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত চারবার হয়েছে। সেই সঙ্গে টানা বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৫৩ দশমিক ৩ মিলিমিটার। সব মিলিয়ে গত তিন দিনে বৃষ্টি হয়েছে ৮৬ মিলিমিটারের বেশি। এ ছাড়া সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কাছাকাছি চলে আসায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।’

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘এবার রংপুর বিভাগে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলুর আবাদ করা হয়েছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে আলুর ক্ষতি হয়েছে এবং পচে নষ্ট হবে। ক্ষেত থেকে পানি সরিয়ে যেকোনোভাবে আলু রক্ষার জন্য চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।’

Source link

Related posts

চট্টগ্রামে বেসরকারি ডিপোর ধর্মঘট স্থগিত

News Desk

আড়িয়াল খাঁ-তে ১০ বার ঘর হারানো নারী এবারও আছেন শঙ্কায়

News Desk

১১ জেব্রার মৃত্যুর পরও সতর্কতা নেই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে

News Desk

Leave a Comment