‘বীর বাহাদুরকে’ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আশিকুর
বাংলাদেশ

‘বীর বাহাদুরকে’ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আশিকুর

শখের বশে একটা গরু পালন করেছিলেন কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার আশিকুর রহমান। চার বছরে শখের গরুটি যে এত বড় হয়ে যাবে ভাবতেই পারেননি। ২৭ মণ ওজনের গরু নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। কুমিল্লায় ক্রেতা না পেয়ে তুলেছেন চট্টগ্রামের হাটে।

আশিকুরের বাড়ি সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের ভুটুয়া শ্রীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একটি ঝুপড়ি ঘরের পাশে আরেকটি ভাঙা ঘর। সেই ঘরের দরজা-জানালা নেই। খোলা পড়ে আছে। ঘরের ভেতরে একটি বিশাল আকৃতির গরু। শখ করে নাম রেখেছেন ‌‘বীর বাহাদুর’। উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। প্রতিদিন তিন কেজি আপেল ও এক কেজি আঙুর খাওয়ান। পানিসহ একদিনে সকাল ও দুপুর মিলে ৪০ কেজি খাবার খায়। তার দাম হাঁকা হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা। 

ক্রেতা না পাওয়ায় হতাশ আশিকুর রহমান বলেন, ‘১৫ লাখ টাকায় গরুটি কেনার লোক কুমিল্লায় নেই। তাই নিরূপায় হয়ে বুধবার রাত ১০টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিই।’

তিনি জানান, ২০১৮ সালে বন্ধুর কাছ থেকে এক লাখ টাকায় এই একটি বাছুর কেনেন। পরে দুই বছর লালন -পালন করেন। ২০২১ সালে গরুটি কুমিল্লার হাঁটে নিয়ে যান। তখন গরুটির দাম ওঠে চার লাখ টাকা। কিন্তু চার লাখে বিক্রি করতে রাজি ছিলেন না আশিকুর। এই নিয়ে তার পরিবারে অনেক ঝামেলা হয়। 

আশিকুর বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নিলাম, এত ঝামেলা যেহেতু হয়েছে আরও হোক। তবুও বীর বাহাদুরকে ছাড়বো না। শুরু হয় আরও বেশি যত্ন। আমার ঘরের অবস্থাও ভালো না। সারারাত না ঘুমিয়ে পাহারা দিতাম। সকালে তার সামনে ১০ কেজি খাবার দিয়ে দুই ঘণ্টা ঘুমাতাম। তারপর যেতাম রাজমিস্ত্রির কাজে। সেখান থেকে দুপুরে ফিরে তাকে গোসল করাতাম, আমিও গোসল করতাম। টাকা শেষ হয়ে গেলে কদিন পরে আবার নতুন একটা কিস্তি তুলি। এখন মাসে ৪০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। তার জন্য দুইটা ফ্যান রেগুলার চলে, সেগুলোর বিল আসে। সবমিলে পরিবার নিয়ে ৬০ হাজার টাকা দরকার হয় মাসে। আমার তেমন আয় নেই। যদি এবার বীর বাহাদুর বিক্রি না হয় তবে বেকায়দায় পড়তে হবে।’

আশিকুরের স্ত্রী লাবলী আক্তার বলেন, ‘গরুটা অনেক শখের। বীর বাহাদুর বলে ডাক দিলেই মাথা নাড়ে, কান নাড়ে, লেজ নাড়ে। আমার স্বামী প্রতিদিন আপেল ও আঙুরসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার আনতো গরুর জন্য। কিন্তু ছেলেমেয়েরা না খেয়ে থাকতো। দরিদ্র পরিবারের মানুষ শখ করে একটা গরু বড় করছে। ক্রেতারা এসে দেখে চলে যায়। বলে, এটা নাকি বাজেটের বাইরে। কেউ এত বড় গরু দেখে পা আগায় না।’

কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম জানান, জেলায় গত বছর ৩৬৩ হাটে কোরবানিযোগ্য দুই লাখ ২৮ হাজার ৬৪২ পশু বিক্রি হয়। সে বছর উদ্বৃত্ত থাকে ১১ হাজার ৬২৫টি পশু। এবার জেলার ৩৩ হাজার ৯৩০ জন খামারি পশু পালন করেছেন। এ বছর পশুর সম্ভাব্য চাহিদা দুই লাখ ৪৮ হাজার। অন্যদিকে প্রায় ১০ হাজার ৪৩২টি কোরবানিযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।

Source link

Related posts

বক্তব্য দেওয়ার সময় মঞ্চে লুটিয়ে পড়লেন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান

News Desk

আবর্জনার শহরে পরিণত হচ্ছে হবিগঞ্জ

News Desk

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ‘পিঁপড়ার গতিতে’ চলছে গাড়ি

News Desk

Leave a Comment