পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি সেতুটির কাজ, লাপাত্তা ঠিকাদার
বাংলাদেশ

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি সেতুটির কাজ, লাপাত্তা ঠিকাদার

টাঙ্গাইলের বাসাইলে ঝিনাই নদীর ওপর একটি সেতুর নির্মাণকাজ পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি। প্রায় ছয় মাস আগে কাজটি ফেলে রেখে লাপাত্তা ঠিকাদার। এর ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার কমপক্ষে ২০ গ্রামের মানুষ। নদীটির দুই পাড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নৌকায় করে প্রতিনিয়ত পারাপার হতে হচ্ছে।

জানা গেছে, বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার সংযোগস্থল কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়া এলাকায় ঝিনাই নদীর ওপর ব্রিজটি প্রায় ১০ বছর আগে পানির স্রোতে ভেঙে যায়। এরপর ২০২০ সালে ২৭ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার ৮৮ টাকা ব্যয়ে সেখানে নতুন করে ২৫৬ মিটার গার্ডার ব্রিজের অনুমোদন হয়। কাজটি পায় ‘হায়দার কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড লিয়াকত আলী জেবি’ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

প্রতিষ্ঠানটি ওই বছরের ১৮ মার্চ নতুন ব্রিজের কাজ শুরু করে। ব্রিজটির নির্মাণকাজ ২০২২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও দীর্ঘ পাঁচ বছরেও শেষ করতে পারেনি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ছয় মাস আগে নির্মাণকাজটি বন্ধ রেখে রাতের আঁধারে পালিয়ে যায়। এই ছয় মাসেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউই ব্রিজটি দেখতেও আসেনি।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, ‘একজন মানুষ মারা গেলে প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক ঘুরে লাশ দাফন করতে হয়। ব্রিজটির কারণে নদীর দুই পাড়ের মানুষের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্ভোগ লাগবে এই নদীতে ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলমান ছিল। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ ফেলে রেখে চলে গেছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল আলম খান বলেন, ‘ব্রিজটি বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার জন্য খুবই জরুরি। এটি লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতস্থল। এখানে একটি ঈদগাহ রয়েছে, সেখানে ছয় গ্রামের মানুষ একত্রে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ ছাড়াও তিনটি গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য একটি কবরস্থান রয়েছে। মানুষ মারা গেলে নৌকায় করে লাশ নিয়ে দাফন করতে হয়। নদীর দুই পাড়ে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ব্রিজ না থাকায় শিক্ষার্থীসহ মানুষ নৌকাযোগে পারাপার হচ্ছে। প্রায় ছয় বছর ধরে ব্রিজের নির্মাণকাজ চলমান ছিল। এই দীর্ঘ সময়েও কাজটি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। এমতাবস্থায় প্রায় ছয় মাস হলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজের নির্মাণকাজ বন্ধ করে পালিয়ে গেছে।’

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি সেতুটির কাজ, লাপাত্তা ঠিকাদার

স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘কাঞ্চনপুর কাজিরাপাড়ায় ঝিনাই নদীর ওপর ২৬৬ মিটার ব্রিজের কাজটি ২০১৯ সালে টেন্ডার হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরুতেই বিলম্ব করে কাজ শুরু করে। প্রথমে কাজের কিছুটা অগ্রগতি ছিল। এক বছর পর থেকে কাজের গতি কমে যায়। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, ঠিদাদারি প্রতিষ্ঠান যদি যথা সময়ে কাজ না করে তাহলে টেন্ডার বাতিল করা হবে। ব্রিজটির কারণে অসংখ্য মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। ব্রিজটি দ্রুত নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’

বাসাইল উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাত্তাউর রহমান বলেন, ‘বাসাইল উপজেলার কাজিরাপাড়ায় ঝিনাই নদীর ওপর ২৫৬ মিটার ব্রিজের কাজ চলমান রয়েছে। এই কাজটির বর্তমানে অগ্রগতি ৬০ শতাংশ। বেশ কিছুদিন ধরে কাজটি বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন সময় ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কাজ শুরু করে আবার বন্ধ করে দেয়। কাজটি বাতিলের জন্য আমাদের জেলা কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেহেতু কাজটি অনেক ধরে বন্ধ রেখেছে ঠিকাদার। সুতরাং কাজটি বাতিল করার জন্য আবার সুপারিশ করা হবে। কাজটি বন্ধ রাখায় ঠিকাদারকে জরিমানার আওতায় আনার জন্য প্রস্তাব করা হবে। রি-টেন্ডার করে খুব দ্রুত কাজটি শেষ করা হবে।’

পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি সেতুটির কাজ, লাপাত্তা ঠিকাদার

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার আখতার হোসেন বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকিং-এ সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য কাজটি বন্ধ রয়েছে। আমাদের সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের চুক্তি রয়েছে। সেখানে আমার একটি বিল পড়ে আছে। ব্যাংকিং সমস্যা সমাধান না হলে তো ব্রিজের কাজটি আমাদের করতে দেবে না।’

Source link

Related posts

চট্টগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু শনাক্ত ৬৬২

News Desk

প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় বসছে ২০ ডিজিটাল স্ক্রিন, নগরীজুড়ে উৎসবের আমেজ

News Desk

পরীক্ষা কখন নেওয়া হবে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment