নৌকা হারিয়ে কান্না থামছে না রাশিদার
বাংলাদেশ

নৌকা হারিয়ে কান্না থামছে না রাশিদার

গোমতীর ঘাটে একা বসে এক নারী। কাছে গেলেই ডুকরে ডুকরে কান্নার শব্দ। খোলা আকাশের দিকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আঁচলে মুখ লুকিয়ে আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে। কখনও নদীর পানিতে মিশে হারিয়ে যাচ্ছে। আঁচল দিয়ে চোখ মুছছেন আর ভাগ্য চুরির কথা বলছেন। তিনি রাশিদা বেগম। তার একমাত্র আয়ের পথ খেয়ার নৌকাটি বুধবার (২২ নভেম্বর) রাতে চুরি হয়ে গেছে। এরপর থেকে নদীর পাড়ে বসেই কাঁদছেন রাশিদা।

জানা গেছে, নগরীর কোলঘেঁষা গোমতী নদী। নদীর একমাত্র মাঝি রাশিদা। গোমতী নদীর কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার কাপ্তানবাজার পাক্কার মাথা অংশে তার খেয়া। সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ১০ টাকায় মানুষকে গোমতী পারাপার করতেন। রশি টেনে নৌকায় যাত্রী পারাপার করে যা আয় হতো তাতে তার সংসার চলতো। ভাঙা নৌকা হওয়াতে বিপাকে পড়েন গোমতীর একমাত্র মাঝি রাশিদা। পরে জেলা প্রশাসন থেকে তাকে একটি নতুন নৌকা দেওয়া হয়। এই নৌকায় দিন ফিরছিল রাশিদার। কালের বিবর্তনে যৌবন হারানো গোমতীর মতো বুধবার রাতে রাশিদার নৌকাটিও হারিয়ে যায়। কেউ তালা ভেঙে নদী থেকেই তার নৌকাটি চুরি করে নিয়ে গেছে। সকালে খেয়াতে এসে নৌকা না দেখতে পেয়ে পাগলের মতো কাঁদছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোমতীর উত্তর পাশের পাকা সড়কটি বেহাল বহু বছর। বাগানবাড়ি, ভূবনগর, রসুলপুর, সত্তরখালি এলাকার মানুষ রাজগঞ্জ বাজার, অফিস-আদালত বা কাপ্তান বাজার পাক্কার মাথা যেতে চানপুরি ব্রিজ পার হতে হয়। স্টিলের ব্রিজে যানজট থাকে সব সময়। জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৩০ টাকা। এ জন্য খেয়াঘাটে ১০ টাকা দিয়ে নৌকা পারাপারে সময় বাঁচে।

রাশিদা বেগম বলেন, গোমতীর উত্তর পাশের গ্রাম রত্নবতি। সেখানে আমার বাড়ি। তিন ছেলে, দুই মেয়ে আর অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে সংসার। স্বামী কোনও কাজ করতে পারে না। গত চার বছর ভাঙা নৌকায় এলাকার মানুষ পারাপার করতাম। পরে জেলা প্রশাসন থেকে আমাকে একটি নৌকা দেয়। কিন্তু গতরাতে নৌকাটি কেউ নিয়ে যায়।

রাশিদার কান্না থামছেই না

এ সময় তিনি কেঁদে উঠেন। বলেন, আমি তো কারো ক্ষতি করিনি। আমার নৌকা নিয়ে আমাকে কেন বিপদে ফেললো। আমি খাবো কী করে? এতবড় সংসার কীভাবে চালাবো? আমার সন্তানের মতো করে রেখেছি এই নৌকা। নতুন নৌকায় কার নজর পড়েছে? আমার আর উপায় কী? এ সময় তিনি কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে মাটিতে বসে পড়েন।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কামরান হোসেন বলেন, খবরটি জেনেছি। আমরা বিষয়টি দেখছি।

Source link

Related posts

ইফতার ও সাহরিতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

News Desk

নাবিক ও জাহাজ অক্ষত উদ্ধারের চেষ্টা করছি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

News Desk

বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে মিয়ানমারের দুই বিজিপিসহ ৩১ রোহিঙ্গা

News Desk

Leave a Comment