দিনাজপুরে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়
বাংলাদেশ

দিনাজপুরে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়

চাল সংগ্রহ অভিযান না পূরণের পথে উত্তরের জেলা দিনাজপুর। এখন পর্যন্ত এই জেলায় ৮১ শতাংশ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। অনেক মিল থেকেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল সরবরাহ করতে পারেনি। এ জন্য ৪৩টি মিলকে ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দিয়েছে খাদ্য বিভাগ। গত আমন মৌসুমেও এই জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এ কারণে ৩১৬টি চালকলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছিল।

দিনাজপুর খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার জেলা দিনাজপুর। দেশে ১৪ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৯৫ মেট্রিক টন চালই সংগ্রহ করা হবে দিনাজপুর জেলা থেকে। তবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত এই জেলায় চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টন। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮১ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ঘাটতি রয়েছে ২৪ হাজার ১২৭ মেট্রিক টন চাল।

তবে এই জেলা ধান সংগ্রহের যে লক্ষ্যমাত্রা তার চেয়ে অনেক বেশি ১২৮ শতাংশ ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। এই জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ হাজার ৬৪৭ মেট্রিক টন, আর সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬ হাজার ২৪৮ মেট্রিক টন। 

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩১ জুলাই পর্যন্ত ধান ও চাল সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যে তা বাড়িয়ে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়েছে।

জেলা খাদ্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় চাল সংগ্রহের জন্য ৮৯৫টি চালকল সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। যার মধ্যে ৬০ শতাংশ চাল দিয়েছে ২২টি চালকল এবং ১০ বা ২০ শতাংশ চাল দিয়েছে ২১টি চালকল। এসব মিল থেকে শতভাগ চাল আসলে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে। তবে চুক্তির বাইরেও বেশ কয়েকটি চালকল রয়েছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, যদি কোনও চালকল চুক্তিবদ্ধ হয়ে ৬০ শতাংশ চাল দিতে পারে তাহলে সেটি আর শাস্তির আওতায় আসবে না। আর যদি চুক্তি না করে কিংবা চুক্তি করে এবং ৬০ শতাংশের নিচে চাল দেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।

এর আগে গত আমন মৌসুমেও এই জেলায় চুক্তিযোগ্য থাকার পরও অভ্যন্তরীণ আমন মৌসুমে সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন না করায় দিনাজপুরের ৩১৬টি চালকল ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল করে খাদ্য বিভাগ। এর মধ্যে ২৯৬টি সিদ্ধ ও ২০টি আতপ চালকল রয়েছে।

দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানায়, গত আমন মৌসুমের মতো এই মৌসুমেও যেসব চালকল সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়নি কিংবা চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর নির্দিষ্ট পরিমাণে চাল দেয়নি, তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে ৪৩টি চালকলের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। চাল সরবরাহ না করার কারণ এবং কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

তবে, গত আমন মৌসুমে যে ৩১৬টি চালকলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের গুদামে চাল না দেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে আবেদন করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যেই ৩২টি চালকল তাদের যৌক্তিকতা তুলে ধরে আবেদন করেছে।

দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী বলেন, ‘বোরো সংগ্রহ মৌসুমে ৮১ শতাংশ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। চাল সংগ্রহের সময় বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি ১৯ শতাংশ চাল সংগ্রহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট চালকলগুলোকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। ৬০ শতাংশ চাল দিয়ে আর চাল দিচ্ছে না এমন ২৩টি এবং ১০ বা তার কিছু বেশি চাল দিয়ে আর দিচ্ছে না এমন ২১টি চালকলকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৫ আগস্টের মধ্যে চাল প্রদান করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। চাল সংগ্রহের পুরো বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে। সেখান থেকে যেভাবে নির্দেশনা আসবে সেই অনুযায়ীই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি বা ১২৮ শতাংশ ধান কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।’ 

বাংলাদেশ অটো মেজর ও হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, ‘ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ ধানের বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে জোর না দিয়ে মিলারদের বাধ্য করে চাল নেওয়া হচ্ছে। যেহেতু মিলারদের লাইসেন্স নিয়ে বাধ্যবাধকতা থাকে, তাই বাধ্য করে চাল নেওয়া হচ্ছে। মিলাররা প্রতি কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা লোকসান করে চাল দিচ্ছেন শুধু লাইসেন্স এবং হয়রানির কারণে। কিন্তু সরকারের উচিত চালের বাজারের চেয়ে ধানের বাজারকে সহনীয় পর্যায়ে রেখে নিয়ন্ত্রণ করা। কারণ ধানের বাজারের উপরে নির্ভর করে চালের বাজার। চাল দ্বিতীয় পণ্য, প্রথম পণ্য ধান।’

Source link

Related posts

হিলিতে বেড়েছে তাপমাত্রা, কমেছে শীত

News Desk

সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত শোলাকিয়া, থাকছে বিশেষ দুটি ট্রেন

News Desk

কৃষকের ৩০ টাকার সবজি হাতবদলে দ্বিগুণ

News Desk

Leave a Comment