দখলদার চক্রের কবলে ভৈরব নদী, দেয়াল তুলে কৃষকদের পানি নিতে বাধা
বাংলাদেশ

দখলদার চক্রের কবলে ভৈরব নদী, দেয়াল তুলে কৃষকদের পানি নিতে বাধা

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ভৈরব নদী এখন আর শুধুই একটি জলপ্রবাহ নয়, এটি রীতিমতো একটি দখলদার চক্রের কবলে পড়া ভূ-সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। উপজেলার কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শমসের এবং তার দুই ভাই শফিকুল শমসের ও তরিকুল শমসের দীর্ঘদিন ধরে অর্ধশত বিঘারও বেশি নদীর জমি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, দখলদারত্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কৃষকদের পানি নিতে নদীতে নামতে পর্যন্ত বাধা দেওয়া হচ্ছে। নদীর পাড় ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে পাকা প্রাচীর, যাতে সাধারণ মানুষ নদীমুখীই হতে না পারে। এলাকার মানুষের ভাষায়, এটা কোনও সাধারণ জমি দখল নয়, বরং এটি একটি সংঘবদ্ধ ও রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটের প্রকাশ্য তাণ্ডব।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঘোপপাড়া ও সাদিকপুর গ্রামের নদীর দুই পাড়জুড়ে শস্যক্ষেত। কিন্তু তা কোনও কৃষকের নয়, বরং প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের কবজায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের ছায়ায় রাশেদ শমসের ও তার ভাইয়েরা বছরের পর বছর ধরে এই জমিগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। প্রতিবাদ করলেই হুমকি, মামলা, হয়রানির শিকার হতে হয়।

স্থানীয় কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘নদীর দুই পাড় পুরো দখলে। আমরা নদীতে নামতেই পারি না। ব্রিজের পাশে দেয়াল তুলে দিয়েছে, যেন কৃষকরা একফোঁটা পানিও না পায়। এটা কি স্বাধীন দেশে সম্ভব?’

অন্য এক স্থানীয় বাসিন্দা, জাহাঙ্গীর আলম সর্দার বলেন, ‘তারা শেখ মুজিবের মুর‌্যাল বানিয়ে, কলেজের নাম ব্যবহার করে নদী ও সরকারি জমি দখল করে নিয়েছে। কলেজ সরকারি করার পেছনেও ছিল রাজনৈতিক প্রভাব। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এখন আবার নতুন করে দখল শুরু করেছে শফিকুল শমসের। এমনকি সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জমিও রেহাই পাচ্ছে না এই চক্রের হাত থেকে।’

নদীর তীরে স্থাপনা নির্মাণ করে ঘিরে রাখা হয়েছে স্থানীয় ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কেনা জমির নিচে নদীর জায়গা ছিল। সেটি দখল করে তাতে ছাতা স্থাপন করেছে শফিকুল। এখন সে আমার জমিতেও প্রাচীর তুলছে। আমি আদালতে গিয়েছি, ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে, তবু কাজ থামেনি। এটাই কি আইনের শাসন?’

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শফিকুল শমসের ছাতা নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, ‘এটি স্থায়ী কিছু না। চাইলে ভেঙে দেবো।’ নজরুল ইসলামের জমি দখলের অভিযোগ তিনি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কুমার দাস বলেন, ‘নদীর জায়গা দখল করে চাষাবাদ করার কোনও সুযোগ নেই। আমরা দ্রুতই লোক পাঠিয়ে তালিকা করবো। যদি দখল হয় তা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেবো।’

Source link

Related posts

বিএনপির সহিংসতা ইসরায়েলি হামলাকে মনে করিয়ে দেয়: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

News Desk

মসলিন শাড়ি তৈরির দাবি আল আমিনের, যাচ্ছে দেশের বাইরেও

News Desk

পুরুষ অভিভাবক ছাড়া হজ-ওমরাহ পালন করতে পারবেন নারীরা

News Desk

Leave a Comment