টানা বৃষ্টির সঙ্গে পানি আসছে ত্রিপুরা থেকে, ডুবেছে ঘরবাড়ি-সড়ক
বাংলাদেশ

টানা বৃষ্টির সঙ্গে পানি আসছে ত্রিপুরা থেকে, ডুবেছে ঘরবাড়ি-সড়ক

চারদিকে পানি আর পানি। ঘরের জিনিসপত্র নিয়ে নদীর পাড়ে এসে বসে আছেন অনেকে। অনেকের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভেসে যাচ্ছে। চেয়ে দেখা ছাড়া যেন কিছুই করার নেই। কুমিল্লার গোমতী পাড়ের কিছু এলাকার দৃশ্য এখন এমনই। ভারত থেকে আসা ঢলে বিপদসীমার কাছাকাছি গোমতীর পানি। দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতির। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকলেই প্লাবিত হবে শহর।

ইতোমধ্যেই বাঁধে অবস্থান করছেন সহস্রাধিক পরিবার। পানিতে ডুবে গেছে দক্ষিণ কুমিল্লার অধিকাংশ সড়ক ও ঘরবাড়ি। ডুবেছে হেক্টরের পর হেক্টর ফসলি জমি।

জানা গেছে, বুধবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় গোমতী নদীর পানি বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল লতিফ। তিনি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো পরিদর্শন করছেন।

সূত্রমতে, কুমিল্লার গোমতী নদীতে পানি বেড়েছে। টানা তিন দিনের বৃষ্টির সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা থেকেও আসছে পানি।

এদিকে, প্লাবিত হয়ে চার হাজার হেক্টর চরের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। দক্ষিণ কুমিল্লার লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোটে অধিকাংশ সড়ক ডুবে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। বিনষ্ট হয়েছে ফসলের জমি। বাড়িঘরে পানি উঠেছে।

বাঁধে এসে উঠেছেন চরের বাসিন্দারা

গোমতী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, ১০ বছর পর গোমতীর পানি এত বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। চরে বসবাসকারী সহস্রাধিক পরিবার নদীর বাঁধে এসে উঠেছে।

সরেজমিনে বুধবার কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রত্নবতী, টিক্কারচর, জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথিলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গোমতীর তীর ঘেঁষে পানির ঢেউ। চরের হাজার একর সবজি ক্ষেত ডুবে গেছে। চরের বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

মালাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন আজাদ জানান, তিনি পরিবার নিয়ে চরের ভেতর বসবাস করেন। গত ১০ বছরে গোমতী নদীতে এত পানি দেখেননি। তার বৃদ্ধ মা ও স্ত্রী সন্তান আর দুটি গাভি নিয়ে গোমতীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।

টানা বৃষ্টির সঙ্গে পানি আসছে ত্রিপুরা থেকে, ডুবেছে ঘরবাড়ি-সড়ক

জালুয়াপাড়া এলাকার কৃষক রহিম মিয়া জানান, এক লাখ টাকা ব্যয় করে ঝিঙা, চিচিঙ্গা, করলা ও চাল কুমড়ার চারা রোপণ করেছেন। লতাগুলো মাচায় উঠবে এই সময়ে গোমতীর পানিতে তার চারাগুলো পানিতে ডুবে গেছে। টিক্কারচর এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধে শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। চরে পানি গলা সমান হয়ে গেছে। ঘর থেকে প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই বের করতে পারেননি।

টিক্কারচর এলাকার রুপিয়া বেগম বলেন, খাট, শোকেস, আলমারি কিছুই আনতে পারিনি। পানিও বেশি হয়ে গেছে। ছেলে মেয়েদের বই খাতাও তেমন নিতে পারিনি। কি করবো বুঝতেছি না।

টানা বৃষ্টির সঙ্গে পানি আসছে ত্রিপুরা থেকে, ডুবেছে ঘরবাড়ি-সড়ক

কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা জানান, তিনি গতকাল রাত থেকে গোমতীর বিভিন্ন পয়েন্টে ঘুরেছেন। বিভিন্ন এলাকায় গোমতীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই সব এলাকায় স্থানীয়রা মাটি ও বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন।

এদিকে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে গোমতী ছাড়াও কাকড়ী, পাগলী ও সালদা নদী দিয়ে ভারত থেকে পানি আসা অব্যাহত রয়েছে। এতে কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ জানান, গোমতীর চরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয়।

Source link

Related posts

চট্টগ্রাম কারাগারে হৃদরোগে আসামির মৃত্যু

News Desk

লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি দূর করবে যে সেতু

News Desk

যশোরে সেবাসংঘ কেন্দ্রে ভোট দিলেন কাজী নাবিল

News Desk

Leave a Comment