Image default
বাংলাদেশ

ছেলেটার আর কেউ রইল না

স্বামী মাহবুবুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে দুই বছর আগে। এরপর স্কুলপড়ুয়া একমাত্র ছেলেকে নিয়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে স্বামীর বাড়িতেই ছিলেন রুবিনা আক্তার (৪৫)।

বাড়িভাড়া থেকে পাওয়া টাকা আর স্বজনদের সহযোগিতায় ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছিলেন। সাত ভাই–বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ষষ্ঠ। হাজারীবাগে বাবার বাড়ি হওয়ায় যে কোনো প্রয়োজনে ছুটে যেতেন সেখানে। সে রকমই এক যাত্রায় শুক্রবার বিকেলে দেবর নুরুল আমিনের মোটরসাইকেলের পেছনে চেপে বসেছিলেন রুবিনা।

তবে সে যাত্রা আর তাঁর শেষ হয়নি। পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে টিএসসি অভিমুখী সড়কে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পেছন থেকে ওই মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয় একটি প্রাইভেটকার। এতে নুরুল আমিন ও রুবিনা দুজনই মোটরসাইকেল থেকে রাস্তায় পড়ে যান। রুবিনার ওপরে উঠে যায় প্রাইভেটকারটি। বাম্পারে কাপড় জড়িয়ে তিনি আটকে যান প্রাইভেটকারের বাঁ দিকের সামনের ও পেছনের চাকার মাঝখানের জায়গায়।

রাস্তায় রুবানার অপর দিকে পড়ে যাওয়া নুরুল আমিন নিজেকে সামলে উঠে দেখেন তাঁর ভাবির ওই অবস্থা। গাড়ির নিচে তাঁকে আটকে রাখা অবস্থায় গাড়িটি দ্রুতগতিতে চালিয়ে টিএসসির দিকে চলে যাচ্ছেন চালক। পেছন থেকে ধাওয়া করেন তিনি। এ সময় টিএসসি এলাকায় থাকা ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানিরা ওই অবস্থা দেখে এগিয়ে যান গাড়ির নিচে আটকে থাকা নারীকে উদ্ধারে। তবে চালক কারও কথা শোনেননি।

বেপরোয়া গতিতে তিনি গাড়ি চালিয়ে চলে যান নীলক্ষেত মোড়ে। ওই মোড় পার হয়ে পলাশী অভিমুখী রাস্তায় ঢুকতেই তাঁর পথ আটকান পেছনে পেছনে আসা লোকজন ও টহল পুলিশের গাড়ি।

এরপর রুবিনা আক্তারকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কিছুক্ষণ পরে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। রুবিনার মৃত্যুর খবরে স্বজনেরা ছুটে আসেন হাসপাতালে।

বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের মেঝেতে গড়াগড়ি করে আহাজারি করছিলেন রুবিনার দুই বোন সুলতানা লিপি ও রোকসানা আক্তার। তাঁরা দুজনেই বারবার বলছিলেন, রুবিনার ছেলেটার এখন কী হবে? তাঁকে কে দেখে রাখবে?

বোনেরা জানান, দুই বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ায় রুবিনা প্রায়ই বাবার বাড়িতে যেতেন। স্বামীর কথা মনে করে কান্না করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রুবিনা ভেঙে পড়েছিলেন। রুবিনার বোন সুলতানা লিপি বলেন, ‘সকালে মুঠোফোনে রুবিনা বলছিল, বোন আমার ভালো লাগতেছে না। শরীরটা ভালো নেই। দুপুরের পর বাসায় আসব। সে আর বাসায় এলো না।’

রুবিনার আরেক বোন রোকসানা আক্তার জরুরি বিভাগের সামনে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমার বোনটার এ কী হলো! আমি সহ্য করতে পারছি না।

আমার বোনের ছেলেটার এখন কী হবে? ছেলেটা তো এতিম হয়ে গেল। রোহান (রুবিনার ছেলে আরাফাত রহমান খান) তোর তো আর কেউ রইল না। তুই এখন কাকে মা বলে ডাকবি, কার কাছে থাকবি। তোকে কে দেখবে বাবা?’

রোহান তেজগাঁও এলাকার একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে বলে স্বজনেরা জানান। রোকসানা আক্তার বলেন, ‘রুবিনা বলত, আমি আর বাঁচব না। আমি মরে গেলে ছেলেটার কী হবে? সে যে সত্যিই চলে যাবে এটা তো বুঝতে পারিনি।’

রুবিনাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তাঁর আরেক বোন সুলতানা লিপি বলেন, ‘এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। রাস্তায় আমার বোনের মতো শত শত মানুষ এভাবে রাস্তায় মারা যাচ্ছেন, বিচার হচ্ছে না। সরকারের কাছে একটাই দাবি, সরকার যেন এসব হত্যার বিচার করে।’

Related posts

আজ থেকে শতাধিক ট্রেন চলবে সারাদেশে

News Desk

জামালপুরে ২৩ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত

News Desk

একজনের দেখাদেখি লটকনে ঝুঁকেছেন শতাধিক চাষি

News Desk

Leave a Comment