‘চেয়েছিলাম শনাক্ত না হওয়াদের মধ্যে স্বামীর লাশ যেন না থাকে’
বাংলাদেশ

‘চেয়েছিলাম শনাক্ত না হওয়াদের মধ্যে স্বামীর লাশ যেন না থাকে’

‘মনে করেছিলাম স্বামী বেঁচে আছেন। প্রতিদিন নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে বলেছি, তিনি যেন ভালো থাকেন, যেন বেঁচে থাকেন। শনাক্ত না হওয়া লাশের মধ্যে আমার স্বামীর লাশ যাতে না থাকে, এই দুয়াই করেছি বারেবার।’এসব কথা বলে ডুকরে কেঁদে উঠেন রেশমী আক্তার। তার স্বামী মো. শাহজাহান সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণের পর নিখোঁজ হন। তার খোঁজে স্বজনরা দিয়েছিল ডিএনএ নমুনা। একমাস আগে দেওয়া এ নমুনার রিপোর্ট বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) হাতে পায় পুলিশ। শনাক্ত না হওয়া লাশের মধ্যে পাওয়া গেছে রেশমীর স্বামী শাহজাহানের লাশ।

স্বামীর লাশ নিতে বিকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন রেশমী আক্তার। তার সঙ্গে ছিল পাঁচ বছর বয়সী ছেলে রিহান ও চার মাসের ছেলে রিহাত। 

তিনি বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ ফোন করে জানায় আমার স্বামীর লাশ শনাক্ত হয়েছে। তখন মনে হলো আমি আরও একা হয়ে গেছি। যে আশায় এতদিন ছিলাম, তাও শেষ। এখন ছোট দুই শিশু সন্তান নিয়ে কোথায় দাঁড়াবো, কার কাছে যাবো। কোথায় আমাদের আশ্রয় হবে?
 
নিহত শাহজাহান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়নহাট এলাকার মো. কালু মিয়ার ছেলে। শাহজাহানের দুই শিশু সম্তানের মধ্যে বড় ছেলে রিহান (৫) ও ছোট ছেলে রিহাতের বয়স ৪ মাস। 

রেশমী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার স্বামী বিএম ডিপোতে লরি চালক ছিলেন। ঘটনার সময় তিনি ডিপোতে ছিলেন। এখন পর্যন্ত ডিপো কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনও টাকা-পয়সা দেয়নি। দেবে কিনা তাও বলেনি। স্বামীর আয়ের ওপর আমাদের পুরো পরিবার নির্ভরশীল ছিল। এখন স্বামী নেই, আয়ও নেই।

মা রেশমী আক্তার বলেন, রিহান যখন তার বাবাকে খোঁজ করে তখন আমরা বলি তার বাবা গাড়ি নিয়ে গেছে। মিথ্যা বলে ছেলেকে স্বান্তনা দিতে হয়। 

শাহজাহান ও রেশমী দম্পতির বড় ছেলে রিহান বলেন, আমার আব্বু গাড়ি নিয়ে গেছে। এখনও আসেনি।

আট জনের লাশ শনাক্ত হওয়ার পর খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন স্বজনেরা সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডিএনএ রিপোর্টে আট জনের লাশ শনাক্ত হয়েছে। তাদের অনেক স্বজন লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন। 
 
তিনি আরও জানান, বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ৫১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে আগে ২৯ জনের লাশ শনাক্ত হয়। আজ আরও ৮ জনের লাশ শনাক্ত হয়েছে। 

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডিএনএর মাধ্যমে মোহাম্মদ হাসেম, মো. আকতার, মো. শাহজাহান, মোহাম্মদ রাসেল, আবদুল মনির হোসেন, আবুল হাসেম, আবদুস সোবহান ও মো. সাকিবের লাশ শনাক্ত হয়েছে। 
 
রাত ৮টা পর্যন্ত রেশমীর স্বামী শাহজাহানের মতো শনাক্ত হওয়া আরও পাঁচ জনের লাশ নিতে হাসপাতালে আসেন স্বজনেরা। 

Source link

Related posts

টিআর-কাবিখার চাল ব্যবসায়ীদের গুদামে, পাচ্ছেন না শ্রমিকরা

News Desk

বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট

News Desk

শিশুদের শিক্ষা, নিরাপত্তা ও সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে আমরা বদ্ধপরিকর

News Desk

Leave a Comment