কুমার নদে ১২৫ বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা ও গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতি বছর এই উৎসবের অপেক্ষায় থাকেন ওই এলাকাসহ আশপাশের কয়েক উপজেলার মানুষ। নৌকাবাইচ দেখতে নদের দুই পাড়ে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের ঢল নামে।
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার তেলজুড়ী এলাকায় প্রতি বছর এ উৎসবের আয়োজন করেন স্থানীয়রা। বৃহৎ এ উৎসবে অংশ নিতে ফরিদপুর ও আশেপাশের জেলা থেকে নৌকা সাজিয়ে বাদ্যের তালে তালে অংশ নিতে হাজির হন অনেকেই। এবারও তার কমতি ছিল না। শুক্রবার বিকালে নৌকাবাইচের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ব্যবসায়ী আজিজুল আকিল ডেভিড শিকদার।
বাইচের নির্ধারিত সময় বিকালবেলা হলেও জুম্মার নামাজের পর থেকে কানায় কানায় ভরে যায় গোটা এলাকা। নদের দু ধারে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধরা উপভোগ করেন এ আয়োজন। অনেকেই নৌকা ও ট্রলার ভাড়া করে এই উৎসব দেখছেন।
উৎসবের মূল আকর্ষণ ছিল গ্রামীণ মেলা। সেখানে নানারকম পসরা বসিয়ে বেচাকেনা করেন দোকানিরা। যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের জামাইরা মেলা থেকে মিষ্টি ও ইলিশ মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যান। শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচকে ঘিরে তিন দিনব্যাপী গ্রামীণ মেলায় মিষ্টির দোকান, ইলিশের দোকান, খেলনা ও বিভিন্ন খাবার দোকানের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা।
মিষ্টি ব্যবসায়ী আরোজ আলী, রতন শেখ, জব্বার মোল্লা বলেন, ‘কয়েক যুগ ধরে এই নৌকাবাইচের মেলায় মিষ্টি বিক্রি করতে আসি। এবারও মেলায় দোকান দিয়েছি। দোকানে রসগোল্লা, আমৃত্তি, দানাদার, জিলাপিসহ বিভিন্ন মিষ্টিসামগ্রী রয়েছে। আবহাওয়া খারাপ হলেও বেচাকেনাও বেশ ভালো হচ্ছে।’
উৎসবের আশা স্কুলশিক্ষক কাজী আমিনুল ইসলাম বললেন, ‘এই নৌকাবাইচ আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য। তেলজুড়ির কুমার নদে বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। এখানে শুধু নৌকা বাইচ নয়, চলে গ্রামীণ মেলা। এখানে গ্রামবাংলার কৃষ্টি ,সংস্কৃতি কারুশিল্প, মৃৎশিল্পসহ নানা পণ্যের সমারোহ ঘটে।’
নৌকাবাইচে মেলা কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম পলাশ মিয়া বলেন, ‘স্থানীয় দল-মত সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে বাইচ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।’
বাইচ শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় পুরস্কার তুলে দেন উপস্থিত অতিথিরা।