কাঁধে নিয়ে ওপরে তোলা হয় রোগী, একইভাবে নামানো হয় লাশ
বাংলাদেশ

কাঁধে নিয়ে ওপরে তোলা হয় রোগী, একইভাবে নামানো হয় লাশ

নিচ থেকে স্ট্রেচার কাঁধে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে তোলা হচ্ছে রোগী। একইভাবে ওপর থেকে নিচে নামানো হচ্ছে লাশ। এই দৃশ্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের। লিফট অচল থাকায় এভাবে প্রতিদিন দুর্ভোগে পোহাচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা। এ ছাড়া নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) এসি অচল থাকায় এবং অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীরা।

হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্র থেকে জানা যায়, পুরাতন পাঁচতলা ভবনে মেডিসিন বিভাগে রোগীদের চাপ সামাল দিতে না পারায় ২০২২ সালে একই ক্যাম্পাসে নির্মিত মর্ডানাইজেশন ভবনটি মেডিসিন বিভাগে উন্নিত করা হয়। ওই সময় মর্ডানাইজেশন ভবনে আড়াই শতাধিক রোগীর বেডের ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসকরা যাতে সহজে ওয়ার্ডে যেতে পারেন সেজন্য এক ভবনের সঙ্গে আরেক ভবনের সড়ক নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সেখানে গড়ে প্রতিদিন সাত থেকে আট শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের ওঠানামার জন্য দুটি এবং চিকিৎসক ও স্টাফদের জন্য একটি লিফট রয়েছে। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে সবকটি লিফট অচল হয়ে পড়ায় এখন স্ট্রেচার কাঁধে তুলে রোগী ও লাশ ওঠানামা করাতে হয়।

ভোগান্তির কথা জানিয়ে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা থেকে আসা স্বজন মৃদুলা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার বাবাকে জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর মেডিসিন বিভাগে ভর্তির জন্য পাঠানো হয়। সেখানে আসার পর জানতে পারি লিফট অচল। অথচ বাবাকে নিতে হবে পাঁচতলায়। রোগী ছাড়া আমার সঙ্গে কোনও পুরুষ ছিল না। পরে স্ট্রেচারের সঙ্গে আসা হাসপাতালের কর্মীরা ওপরে তোলার জন্য ২০০ টাকা দাবি করেন। চার কর্মী স্ট্রেচারে করে বাবাকে পাঁচতলায় উঠিয়েছেন। সেখানে বেড দেওয়া হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আবারও নিচে নামাতে হবে বাবাকে। এজন্য আবার স্ট্রেচার ডাকা হলে তারা এসে রোগীকে নামিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বেডে দিয়ে যান। এভাবে নামাতে-ওঠাতে আমার খরচ হয়েছে ৮০০ টাকা।

আরেক রোগীর স্বজন মোহম্মদ হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে লিফট অচল। ওই সময় আমার রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে নিচে নিতে হয়েছে আবার ওপরে তুলতে হয়েছে। এতে ১২০০ টাকা গুনতে হয়েছে। আর নিচ থেকে পাঁচতলায় স্ট্রেচারে কাঁধে সিঁড়ি বেয়ে উঠা অনেক কষ্টের। এখানে আমাদের ক্ষোভটা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের ওপর। তারা দেখছেন লিফট বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। তারপরও সচলে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। এটি রোগীদের প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছাড়া কিছুই নয়।

পাশাপাশি আইসিইউ বিভাগ অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকার কথা জানিয়ে কাসেম মৃধা বলেন, ‌রোগী অনুুপাতে শৌচাগারের সংখ্যা কম। এ কারণে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। দাঁড়িয়ে থেকে অনেকের চাপ ধরে রাখা সম্ভব হয় না। এজন্য শৌচাগারের পাশে বারান্দায় অনেকে কাজ সেরে ফেলেন। ফলে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকতে হয়।

পাঁচতলায় ভর্তি রোগী জাহানারা বেগম বলেন, ‘ভর্তি হওয়ার পর আমাকে যে বেড ব্যবহার করতে দেওয়া হয়, সেখানে থেকে ফোম তুলতেই পোকামাকড়ের স্তূপ দেখতে পাই। অন্য রোগীর স্বজনরা এসে বলেন, ফোম তুলতে যাবেন না। তাহলে ওই পোকা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। তাদের জন্য পোকা পরিষ্কার করতে পারিনি। বিষয়টি নার্সদের জানানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। একই অবস্থা প্রতিটি বিছানার।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিসিন বিভাগের এক সিনিয়র নার্স বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মেডিসিন বিভাগের আইসিইউ ওয়ার্ডের বেশিরভাগ এসি অচল। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হলেও তা আর সচল হয়নি। এতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা পড়ছেন আশঙ্কাজনক অবস্থায় থাকা রোগীরা।

আইসিইউতে এসি অচল থাকায় এবং অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীরা

এ ব্যাপারে হাসপাতালের উপপরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লিফট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়িত্বরত গণপূর্ত বিভাগকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তারা জানিয়েছে দ্রুত লিফট সচল করে দেবে। এ ছাড়া আইসিইউ বিভাগের এসির বিষয়টিও গণপূর্ত বিভাগ দেখভাল করছে। এখানে যন্ত্রাংশ রক্ষণাবেক্ষণের সব দায়িত্ব তাদের। আমাদের কাজ হচ্ছে কোনও সমস্যা হলে তাদের জানানো।’

অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আড়াই শতাধিক বেডের মেডিসিন বিভাগে বর্তমানে ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন আরও এক হাজার স্বজন। এতে শৌচাগার এবং মেঝে পরিষ্কার করলেও তা পরিষ্কার থাকছে না। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। শৌচাগার ব্যবহার করে বেশি পরিমাণ পানি দিতে হবে। মূলত রোগী অনুুপাতে কর্মচারী না থাকায় এসব সমস্যা দেখা দিয়েছে।’

লিফট সচলের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের উপপরিচালক আসলাম উল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাসপাতালের আটটি লিফট রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ কোম্পানির পাওনা রয়েছে ৫৫ লাখ টাকা। ওই টাকা পরিশোধ না করায় লিফট সচল করা নিয়ে গড়িমসি করছেন তারা। আগামী ১ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের কিছু বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হবে। বাকি টাকা ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। আশা করছি, দু’একদিনের মধ্যে তাদের লোকজন এসে লিফট সচল করে দিয়ে যাবেন।’

Source link

Related posts

পাহাড় কেটে রাস্তা প্রশস্ত করছে এলজিই‌ডি

News Desk

আমদানি করা মোবাইল ফোনের দাম বাড়বে

News Desk

‘এমন পরিবেশ পাবো, মিলেমিশে থাকবো, স্বপ্নেও ভাবিনি’

News Desk

Leave a Comment