কম পথে বেশি ভাড়া
বাংলাদেশ

কম পথে বেশি ভাড়া

ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করতে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নাড়ির টানে বাড়ি ছুটছেন দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার মানুষ। পদ্মা সেতু চালুর পর কোনও দুশ্চিন্তা ছাড়াই দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ বাড়ি ফিরতে পারছেন। তবে ফেরি পারাপারের দুর্ভোগ কমলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় আর গরমের মধ্যে ভোগান্তিকে সঙ্গী করেই ফিরতে হচ্ছে যাত্রীদের।

সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ- ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে অল্পপথে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় যেতে যাত্রীদের গুনতে হচ্ছে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া।

শনিবার (৯ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি, কুতুবপুর ও পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা থেকে আসা কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। 

যাত্রীরা জানান, ঢাকা থেকে শিবচর যেতে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত বাস ভাড়া দিতে হচ্ছে। অনেকে শরীয়তপুরে যাওয়ার জন্য পদ্মা সেতুর জাজিরা টোল প্লাজায় নামলেও তাদের একই ভাড়া গুনতে হচ্ছে। যাত্রীদের অনেকেই জানিয়েছেন- এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কুতুবপুর, পাঁচ্চর, বন্দরখোলা ও সূর্যনগর পর্যন্ত আসতে তাদের চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা গুনতে হচ্ছে।

সকাল থেকেই এক্সপ্রেসওয়েতে পরিবহনের ব্যাপক চাপ ছিল। দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার পরিবহনগুলো সেতু দিয়ে পার হচ্ছে। যারা মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার বাসিন্দা তারা এক্সপ্রেসওয়ের শিবচরের কাঠালবাড়ি, পদ্মা সেতুর জাজিরা টোল প্লাজার পাশে, কুতুবপুর, কাঁঠালবাড়ির সীমানা এলাকা, পাঁচ্চর, বন্দরখোলা, শরিয়উল্লাহ সেতু, সূর্যনগরসহ বিভিন্ন স্থানে নামছেন। ঢাকা থেকে পাচ্চর বাসস্ট্যান্ডের দূরত্ব মাত্র ৫০ কিলোমিটার। এসব এলাকায় ঢাকা থেকে ভাড়া ২০০ টাকার বেশি না বলে জানান যাত্রী ও স্থানীয়রা। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের চাপ থাকলেও যাত্রীর তুলনায় পরিবহনের সংকট রয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে বাড়তি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ফরিদপুর ভাঙ্গা পর্যন্ত না যেয়েও শিবচর নেমে ভাঙ্গার ভাড়া দিতে হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়ের যেকোনও স্থানের জন্য একই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা।

ঢাকা থেকে আসা শিবচরের শরিফুল বলেন, রাজধানীর উত্তর বাড্ডা থেকে আকাশ পরিবহন নামে একটি বাসে শিবচরের পাঁচ্চর পর্যন্ত পাঁচশ’ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া দুইশ’র বেশি না। 

মহিউদ্দিন নামে আরেক যাত্রী বলেন, সকালে গাংচিল পরিবহনে গুলিস্তান থেকে তিনশ’ টাকা দিয়ে এখানে আসলাম। অথচ পদ্মা সেতু চালুর আগেও ১৫০ টাকায় আমরা গুলিস্তান যেতাম। 

পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় ঢাকা থেকে আসা নজরুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেনসহ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে। তারা জানান, পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা পরিকল্পনা করে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলছেন। এখন দ্বিগুণ, তিনগুণ বাস ভাড়া নিচ্ছে তারা। স্বপ্ন ছিল সেতু উদ্বোধন হলে ঢাকা-শিবচর কম টাকায় আসা যাওয়া করা যাবে, তা আর হচ্ছে না। আগে কম টাকায় বেশি সময় লাগতো, এখন বেশি টাকায় কম সময় লাগে, এই আর কি উন্নতি।

বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলরত কয়েকটি বাসের চালকদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনও মেন্তব্য করতে রাজি হননি। চালকরা পরিবহন কোম্পানির মোবাইল নম্বর দিয়ে সেখানে অভিযোগ দিতে বলেন। 

পরে তাদের দেওয়া নম্বরে কল করা হলেও কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

শিবচর হাইওয়ে থানার ওসি গাজী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়কে গাড়ির চাপ রয়েছে। দূরপাল্লার পরিবহনসহ ব্যক্তিগত যানবাহনের চাপও অনেক। যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা মহাসড়কে রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টিম দায়িত্ব পালন করছে। পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা থেকে শুরু করে পাঁচ্চর, সূর্যনগর যাত্রী ছাউনি, পুলিয়া, মালিগ্রাম, বগাইল টোল প্লাজাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশের টহল রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে যানজটসহ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।  

 

Source link

Related posts

৩০ বছরের পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন তারা

News Desk

সড়কে নিহত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১২ ছাত্রলীগ নেতাকে স্মরণ

News Desk

দেশে করোনায় মৃত্যু কমলেও বেড়েছে সংক্রমণ

News Desk

Leave a Comment